চলতি মৌসুমে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে রংপুরের গংগাচড়ার বিনবিনা ও ইচলী গ্রামে ৭০টি পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন আতঙ্কে আছে ওই গ্রাম দুটির আরও প্রায় তিন হাজার পরিবারের বাড়িঘর, আবাদি জমি, বিনবিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ ও পাকা রাস্তা।
দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে বিনবিনা ও ইচলী গ্রামের চার সহস্রাধিক পরিবারের বাড়ি-জমি নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় রয়েছে।
ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসেই তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়েছে বিনবিনা গ্রামের মোট ৫০টি পরিবারের বাড়িঘর। ইচলী গ্রামের ভেঙেছে ২০টি বাড়িঘর। এসব পরিবার বিভিন্ন বাঁধ, আত্মীয়স্বজন ও অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে দিনাতিপাত করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছরই এই এলাকায় ভাঙনের কবলে পড়েন মানুষজন। সাময়িকভাবে বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হলেও টেকসই কোনো উদ্যাগ নেয়া হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম মাস্টার জানান, দুটি গ্রামের প্রায় চার হাজার পরিবারের বাড়িঘর, বিনবিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবাদি জমি তিস্তার ভাঙনে চরম হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধ করা না গেলে এ গ্রাম দুটি মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। আমরা দ্রুত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা চাই। কিন্তু কে শুনবে আমাদের আহাজারি?’
ভাঙনে বাড়ি হারিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয়ভাবে পাকা রাস্তার পাশে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি করে নদীতে ফেলা হচ্ছে। তাতে তেমন কোনো ফল মিলছে না। আমাদের বাড়ি তো গেইচে। আমার ভাইদের বাড়ি বুঝি রক্ষা করতে পারি না।’
বিনবিনা গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বাহে, তোমরা দেকো কেমন করি ভাংগোছে নদী। হামার সব শ্যাষ। কিচ্ছু নাই। বউ-বাচ্চা নিয়ে মানষের বেড়ে আগনেত (অন্যের বাড়ির উঠান) আছি। কোনদিন কাই কী দিবে তার অপেক্ষায় আছি। যেকনা বাড়ি-ভিটা আচিল সেটাও আর থাকিল নে....।’
হোসেন আলী নামে আরেক ব্যক্তি জানান, ‘শোনোছি নদী যেন না ভাঙে সে জন্য কত কিছু নাকি করোছে। কই হামরা তো কিছু দেকি ন্যা? হামার ঘরবাড়ি গেইল। এলা কোটে থাকি হামরা। কামলা দিয়া কি জমি কেনা যায়, বাড়ি করা যায়। হামার জীবন এলা নদীর বান্দোত (বাঁধ) কাটপে। বাপের মেলা কিছু আচিল এলা হামরা ফকির।’
কোলকেন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, ‘ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিশাল জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও চরাঞ্চল হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদী জানান, পশ্চিম ইচলী গ্রামে তিস্তার ভাঙন প্রতিরোধে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে অনেক যোগাযোগ করেছি। চরাঞ্চলে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের তেমন সহযোগিতা পাচ্ছি না। তাই তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এসডি-৩) প্রকৌশলী তৈয়বুর রহমান জানান, এই এলাকাটি তিস্তার বাম তীর। ডান এবং বাম তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যবর্তী এলাকায় এই দুটি গ্রাম। সাময়িকভাবে এই এলাকাটি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করার কোনো সুযোগ নাই। যখনই ভাঙন শুরু হয় তখনই ব্যবস্থা নিই।