বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিকের ‘ভৌতিক’ তালিকা

  •    
  • ৭ আগস্ট, ২০২১ ০৮:৫৩

বরগুনায় দুস্থ জনগণের কর্মসৃজন প্রকল্পে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তালিকায় প্রবাসীদেরও নাম দেখিয়ে ভাতার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।  

তাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সে অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে ভাতা। তারপর টাকা তুলেও নেয়া হয়েছে।

যাদের নামে অ্যাকাউন্ট, তারা কিছুই জানেন না। এমনকি কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করলেও তাদের নাম তালিকায় তুলে সরকারি ভাতা তোলা হয়েছে।

বরগুনায় কর্মসৃজন প্রকল্পে ঘটেছে এ ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, দুস্থ পরিবারের স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি টাকা এভাবে লোপাট করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলার ৪২টি ইউনিয়নে দুটি পর্যায়ে ১৮০টি প্রকল্পের অনুকূলে ৭ কোটি ২৬ লাখ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

১৮ থেকে ৬০ বছরের কর্মক্ষম ভূমিহীন নারী ও পুরুষেরা সুবিধাভোগী হিসেবে এ প্রকল্পে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করবেন। বরগুনা সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৫৩৮ জন অতি দরিদ্র শ্রমিকের ৪০ দিন করে ৮০ দিন কাজ করার কথা। ৮০ দিনে শ্রমিকপ্রতি ১৬ হাজার টাকা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাওয়ার কথা।

তালিকায় শ্রমিকের নাম ও ব্যাংকে প্রত্যেকের নামে হিসাব নম্বর রয়েছে। কিন্তু এসব শ্রমিকের অধিকাংশেরই দাবি, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন তো দূরের কথা, প্রকল্পে কাজ করার বিষয়েই কিছু জানেন না তারা। এমনকি যারা বছরের পর বছর প্রবাসী এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত, তাদের নামও রয়েছে তালিকায়।

প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ৪০ দিনের মধ্যে নির্দিষ্টসংখ্যক দুস্থ শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে হয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি থাকে। এ কমিটির সভাপতি হন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা।

এ কমিটিই মূলত মাঠপর্যায়ে কাজ বাস্তবায়ন করে। শ্রমিকের শ্রমমূল্য প্রতিটি শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়ে থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) দ্বিতীয় পর্যায়ে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ‘সাঝিপাড়া বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন সোহরাফ হাওলাদারের বাড়ি থেকে উত্তর দিকে দুলাল ভূঁইয়ার বাড়ি পর্যন্ত’ মাটির রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয় ৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, যা ১২১ জন স্থানীয় অতি দরিদ্র শ্রমিকের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার কথা।

এ তালিকার ৫৯ ও ৬০ ক্রমিক নম্বরে রয়েছে ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরকগাছিয়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুল গনি হাওলাদারের দুই ছেলে মো. সোহেল ও মো. জুয়েলের নাম, যাদের অগ্রণী ব্যাংক বরগুনা শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর রয়েছে। অথচ তারা দুজন তিন বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করছেন।

এ দুজনের ভাই মো. রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে থাকতে কখনো তারা শ্রমিকের কাজ করেননি। তাই শ্রমিকের তালিকায় ভাইদের নাম দেখে অবাক হয়েছি। দেশে না থেকেও তাদের নাম রাস্তায় কাজের তালিকায়।’

রাসেল জানান, শ্রমিকের তালিকায় ভাইয়ের নাম দেখে তারা অপমানিত বোধ করেছেন।

তালিকার ১০৭ ক্রমিক নম্বরে রয়েছেন একই এলাকার আলী আহম্মদ খলিফার ছেলে মো. জামাল খলিফা এবং ৩৯ ক্রমিক নম্বরে রয়েছে মো. কনু আকনের স্ত্রী লাইলী বেগমের নাম। এদেরও অগ্রণী ব্যাংক বরগুনা শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর রয়েছে।

এ বিষয়ে লাইলী বেগম বলেন, ‘আমি কোনো সময় রাস্তায় অথবা শ্রমিকের কাজ করি নাই। আমার নাম শ্রমিকের তালিকায় আছে, আপনাদের কাছেই শুনলাম।’

একই দাবি করে জামাল খলিফা বলেন, ‘যারা আমাদের ভোটে নির্বাচিত হন, তারা আমাদের বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালিকাভুক্ত অধিকাংশ সদস্যই জানেন না তাদের নামে কাজ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে জেলার ছয়টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নে একই ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

প্রবাসীদের নাম শ্রমিকের তালিকায় থাকার বিষয়ে ঢলুয়া ইউনিয়নের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের দিয়ে তালিকা তৈরি করার কারণে সমস্যা হয়েছে। প্রতিদিন ২০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিকরা কাজ করতে না চাওয়ায় বিকল্পভাবে কাজ করানো হচ্ছে।

একই দাবি জেলার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তৌফিকুজ্জামান তনুসহ একাধিক চেয়ারম্যানের।

শ্রমিকের নামে ব্যাংক হিসাব থাকা সত্ত্বেও অন্যরা কীভাবে টাকা তুলে নেন, জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংক বরগুনা শাখার ব্যবস্থাপক এ এম মাজহারুল ইসলাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

বেতাগী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওলিউল ইসলাম বরগুনা সদরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালীন কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, পিআইও ওলিউল ইসলাম কর্মসৃজন প্রকল্পের লোপাট অর্থ বিভিন্ন দপ্তরে ভাগাভাগি করেছেন। এমনকি বরগুনার সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন ও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর নামের তালিকা করে তাদের টাকা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী জানান, ৪০ দিনের কাজে অনিয়মের খবর প্রকাশ না করার শর্তে ওলিউল ইসলাম তাদের নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছেন। তবে ওই টাকা তারা নেননি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওলিউল ইসলাম অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি। কাজ ঠিকমতো হয়েছে; শ্রমিকরাও টাকা পেয়েছেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কে কী অভিযোগ করেছে, এটা বিবেচ্য না; কাজ ঠিকমতো হয়েছে।’

টাকা ভাগাভাগি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন কথা। আমি কাউকে কখনো টাকার অফার করিনি।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এবং বিল প্রদান সবকিছু হয়ে থাকে উপজেলা ত্রাণ অফিস থেকে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক থেকে একজনের হিসাবের টাকা অন্যজনে কীভাবে নেন, সেটা ব্যাংক কর্মকর্তাদের দেখা উচিত।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, হতদরিদ্র শ্রমিকের বাইরে গিয়ে এ প্রকল্পের কাজ করার সুযোগ নেই। আর এ ক্ষেত্রে আইনের লঙ্ঘন করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর