রাজবাড়ীর রেল স্টেশন চত্তরে নিয়মিত শ্রমিকের হাট বসে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই শ্রমিক বেচাকেনা।
এখানে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা আসেন কাজ করতে। কাজে এসে তারা একটানা এক-দেড় মাস থাকেন।
রাজবাড়ী রেলস্টেশন এ আসা কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তারা বিগত বছরগুলোতে রাজশাহী থেকে ট্রেনে করে রাজবাড়ীতে আসতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে তাদের ভিন্ন বাহনে আসতে হচ্ছে। ভাড়াও যাচ্ছে কয়েকগুণ বেশি।
রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজবাড়ীতে আসেন তারা। এই সময় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। শ্রমিকরা এখান থেকে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় পাট কাটা ও ধান লাগানোর কাজে যান। এই অঞ্চলগুলোতে ধান ও পাটের আবাদ ভালো হয়। রেল স্টেশন চত্তরে এসে গৃহস্থরা দরদাম করে প্রয়োজন অনুসারে এই শ্রমিকদের নিয়ে যান বাড়িতে।প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকার বিনিময়ে কাজ করেন তারা।
রাজবাড়ীর কানাডা বাজার থেকে আসা গৃহস্থ আব্দুর রশিদ মন্ডল জানান, ‘ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিতে আসছি। শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য প্রতিদিন ৭০০ টাকা করে চাচ্ছেন। আমি ৫০০ টাকা করে হলে নিব।’শ্রমিকরা জানান, অনেক সময় কাজ পান না তারা। সে সময়গুলো কাটে বড় কষ্টে। কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে আসা শ্রমিক আনছার প্রামাণিকের বয়স ৬৫ বছর। বয়স হলেও সংসারের অভাব তাকে আসতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে রাজবাড়ী রেল স্টেশন এ আছি। বয়স হয়ে গেছে তাই সবাই কাজে নিতে চায় না। স্টেশনে দিন পার করছি, হোটেলে খাচ্ছি। আরও বলেন, এখানে আছি কাজ পেয়েই যাবো।নওগাঁ থেকে আসছেন ডালিম কুমার, নিতাই কুমার ও রুবেল মহান্ত। তারা সোমবারে এসেছেন রাজবাড়ীতে সেই দিন বিকেলেই তারা বিক্রি হয়ে চলে যান কাজে। আজকে আবার স্টেশন এ এসে বসে আছেন। তাদের আশা, আজকে আবার অন্য জায়গায় কাজ পেয়ে যাবেন। না পেলে স্টেশন এই রাত পার করতে হবে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন আশ্রাফুল, রফিকুল ও ছুইমুদ্দিন। তারা বলেন, চাপাইয়ে আমের সিজেন ছাড়া তেমন কোন কাজ থাকে না। আমরা শিখেছি শুধু কৃষিকাজ। এই জন্যই কাজ না থাকায় বিভিন্ন জেলায় কাজে গিয়ে থাকি। আজ এখানে থাকি, তো কাল ওখানে থাকি। এভাবেই কাটে আমাদের জীবন।