বাঙালির মনন-চিন্তা-চেতনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে থাকা নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্ব শিল্প-সাহিত্যের উজ্জ্বল এই নক্ষত্রের প্রয়াণের ৮০ বছর পার হচ্ছে আজ শুক্রবার।
দীর্ঘ সময়ে তার সৃষ্টিকর্ম মলিন না হলেও করোনাভাইরাস মহামারিতে নীরবেই কেটে যাচ্ছে আরেকটি ২২শে শ্রাবণ।
নওগাঁর আত্রাইয়ের পতিসরে যে কাচারিবাড়িতে কবিগুরুর জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে, সেখানে নেই কোনো কোলাহল কিংবা কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা। করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও নীরব কাচারিবাড়ি। বন্ধ রয়েছে সর্বসাধারণের প্রবেশ। এমনকি অনলাইনেও কোনো আয়োজন করা হয়নি।
রবীন্দ্রসংশ্লিষ্টরা জানান, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও কালিগ্রাম পরগনাসহ তিনটি জমিদারি ছিল। ভাগ-বাঁটোয়ারা সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে কালিগ্রাম পরগনা। সেই জমিদারির দায়িত্ব নিতে রবিঠাকুর পতিসর আসেন ১৮৯০ সালের ডিসেম্বরে।
কালিগ্রাম এস্টেটের কাচারিবাড়ি ছিল পতিসরে। এখানকার ছায়াঘেরা পরিবেশ এবং পাশের নাগর নদী রবীন্দ্রনাথকে মুগ্ধ করেছিল। এটি তার অনেক সাহিত্য ও রচনাবলিতে ফুটে উঠেছে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত অনেক নিদর্শন রয়েছে। কাচারিবাড়ির পাশেই রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর।
স্থানীয় রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক এম মতিউর রহমান মামুন বলেন, রবীন্দ্রনাথের পিতামহ ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি কেনার পর ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার জন্য এ অঞ্চলে আসেন।
এই কাচারিতে অবস্থানের সময় তিনি বেশ কিছু কাব্য, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেন। নোবেল পাওয়ার পর সবশেষ ১৯৩৭ সালে পতিসরে আসেন রবীন্দ্রনাথ।
পতিসরের স্থাপনাগুলো দেখতে অনেকটাই শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে তার পরিবারের স্থাপনাগুলোর মতোই। এখানে একটি দোতলা কুঠিবাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া কুঠিবাড়ি ঘিরে বেশ কিছু ভবনের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়।
কাচারিবাড়ির পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। মূল ভবনের সামনেই রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আবক্ষ মূর্তি। এ ছাড়া ভবনে প্রবেশের জন্য রয়েছে নান্দনিক একটি প্রবেশপথ।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এখানে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে পতিসর কাচারিবাড়িতে ২০২০ সাল থেকে কোনো ধরনের আয়োজন নেই। অনেকটা নীরবেই কেটেছে প্রিয় এই কবির জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস।
‘আজ বিশ্বকবির ৮০তম মহাপ্রয়াণ দিবসেও মহামারির কারণে বন্ধ রয়েছে সব আয়োজন। ভার্চুয়ালি কোনো আয়োজনও করা হয়নি স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে। অন্তত ভার্চুয়ালি কিছু আয়োজন করা হলে প্রিয় কবিকে নিয়ে কিছু বলা যেত, স্মরণ করা যেত আনুষ্ঠনিকভাবে।’
নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক এ বি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কবিগুরুর অনেক স্মৃতিমাখা স্থান আত্রাইয়ের কাচারিবাড়ি। অনেকটা সময় তিনি এখানে কাটিয়েছেন। করোনার কারণে কি তার প্রয়াণ দিবস বন্ধ থাকবে?
‘ভার্চুয়ালি তো আয়োজন করা যেত। সেটাও শুনলাম স্থানীয়ভাবে করা হচ্ছে না, যা দুঃখজনক। শুধু মুখে নয়, রবীন্দ্রপ্রেম অন্তরেও ধারণ করা উচিত।’
পতিসর কাচারিবাড়ির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আবুল কালাম হোসেন জানান, করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকে কাচারিবাড়িতে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে সর্বসাধারণের। প্রতিবছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস পালন করা হলেও গত বছর থেকে তা বন্ধ আছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসেও এখানে নেই কোনো আয়োজন।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম মহাপ্রয়াণ দিবসের সব আয়োজন বন্ধ আছে। ভার্চুয়ালিও কোনো আয়োজন নেই। আমরা আশা করছি, আগামী বছর বড় পরিসরে কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস পালন করা হবে।’