আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক স্লোগান, পুষ্পস্তবক অর্পণ করা শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার সেই ওসির তীব্র সমালোচনা করেছেন আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, দেশ ও পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ক্ষতি করেছেন ওসি আক্তার হোসেন।
নিজের ফেসবুক পেজে শুক্রবার দুপুরে আপলোড করা ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আপনারা জানেন যে গতকালকে শেখ কামাল সাহেবের জন্মদিনে শরীয়তপুরের পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান দেয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই জিনিসটা দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে দু-একটা কথা বলা দরকার।
‘আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেন যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্লোগান দেয়ার মানুষ কী এতই কম যে একজন ওসি সাহেবের এই স্লোগান দিতে হবে। আমি খেয়াল করে দেখলাম যে উনি বলছেন আবেগ থেকেই স্লোগান দিয়েছেন।
‘আমার কথা হচ্ছে, আপনি যখন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আবেগ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে পানিশমেন্ট নিয়ে আসা উচিত।’
ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের যে নীতিমালা বা আইন রয়েছে, সেটির ব্যত্যয় ঘটানোর পরও তিনি এখনও ওই জায়গাতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন! একটা জিনিস কী জানেন? মায়ের চেয়ে যখন মাসির দরদ বেশি হয়, তখন বুঝে নেবেন আপনার অবস্থা কিন্তু ভালো না।
‘৭৫ সালের আগে বঙ্গবন্ধুর মায়ের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি কান্নাকাটি করছিল বর্তমানে সারা বিশ্বে যে বেইমান হিসেবে পরিচিত, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত সেই খন্দকার মোশতাক। তার কান্নায় নাকি বোঝা যাচ্ছিল না যে বঙ্গবন্ধুর মা মারা গেছেন নাকি খন্দকার মোশতাকের মা। এর পরের ইতিহাস তো আপনারাই জানেন। এই মোস্তাকই ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে।’
আলোচিত এই আইনজীবী বলেন, ‘আবেগ দেখানো ভালো। কিন্তু আপনি যখন আবেগ দেখাতে গিয়ে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলেন, তখন সরকারের কিন্তু অনেক ক্ষতি করে দিলেন। অনেক ওসি এবং পুলিশ কর্মকর্তারা দলমতের ঊর্ধ্বে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। এই ওসির কর্মকাণ্ড কারণে তাদের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?’
সবাইকে সতর্ক করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আপনারা জানেন যে সামান্য চাকরিজীবী লীগের কারণে সরকার কতো কঠোর। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সরকার আটক করেছে এমন ভূঁইফোঁড় চাকরিজীবী লীগ সংগঠন করায়। এখন এমন অবস্থা হইছে এ ধরনের ওসি সাহেবরা দুই দিন পরে বলবেন একটি পুলিশ লীগ করা যায় কি না?’
তিনি বলেন, ‘সতর্ক হওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় এখন। পঁচাত্তর সালে আমরা সতর্ক হতে পারিনি বলেই বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। আপনি যদি দলকে সত্যি ভালোবাসেন, তাহলে দলের প্রতি এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘আপনি যদি দেশকে সত্যি ভালোবাসেন, তাহলে দেশের প্রতি এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনি যদি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হয়ে কাজ করবেন, তখন এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
ব্যরিস্টার সুমন আরও বলেন, ‘আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে, মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের কাছে অনুরোধ করব রাষ্ট্র-দল সবগুলাকে একাকার করার জন্য এবং বিশেষত এই সরকারকে কলঙ্কিত করার জন্য, বিব্রত করার জন্য, পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বিব্রত করার জন্য তার (ওসির) বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, চাকরিজীবী লীগের বিরুদ্ধে যেভাবে অ্যাকশন নেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে।’