মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় হাসাইল নগরজোয়ার খালের ওপর ২০২০ সালে নির্মিত সেতুটি দুই মাস না যেতেই পানির স্রোতে হেলে পড়েছিল। ৩২ লাখ টাকার সেতুটি এর এক বছরের বেশি সময়েও সংস্কার করতে পারেনি প্রশাসন।
সেতু ভেঙে পড়ায় স্থানীয় হাসাইল চরাঞ্চলের ১৫টি ও শরীয়তপুরের চরাঞ্চলের পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের উপজেলার সদরে যাতায়াতের প্রধান সড়কই হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন। প্রতিদিনের ও জরুরি প্রয়োজনে এখন হাজার হাজার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাব আর অবহেলার কারণকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি সংস্কার করা যেমন হয়নি, নতুন সেতু নির্মাণেও নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।
তারা জানান, গত বছরের এপ্রিলে সেতুটি নির্মাণে উপজেলার নগজোয়ার, পাচঁনখোলা, মান্দ্রা, আটিগাঁও, ডাইনগাঁও, হাসাইল, বানারীসহ ১৫ গ্রাম এবং শরিয়তপুরের নওপাড়া, জয়বাংলা, চিডারচর, বাবুরচর, ভানাদেশ গ্রামের মানুষের চলাচল সুগম হয়।
তবে নির্মাণের দুই মাস না যেতেই দেখা দেয় বিপত্তি। জুনে বর্ষার পানির স্রোতে ভেঙে এক পাশে হেলে পড়ে সেতুটি। ভেঙে যায় সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কও। এখন পুরোপুরিই সংস্কারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ভাঙা সেতুটি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের পথের কাঁটা।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রাসেল ফখরুদ্দিন জানান, শুষ্ক মৌসুমে এলাকাবাসী পাশের জমি দিয়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে পড়েছে চরম দুর্ভোগে। সেতু ভেঙে যাওয়ায় প্রধান সড়কেও যান চলছে না। বিচ্ছিন্ন সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে হচ্ছে নৌকায়। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
আরেক বাসিন্দা জানান, সেতু ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে চলাচল। এতে বেকার হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলচালক। তাদের কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।
কহিনুর নামের এক নারী জানান, চিকিৎসার প্রয়োজনের উপজেলায় যেতে-আসতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য খুবই কষ্ট হয়ে পড়েছে।
কৃষিপণ্য দিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এখন উৎপাদিত কৃষিপণ্য উপজেলা বা অন্য এলাকায় পাঠাতে পারছেন না তারা। যে পণ্য পাঠানো হচ্ছে তাও অনেক দুর্ভোগের পর পাঠাতে হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে জানা যায়, সেতুটি নির্মাণ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেঘলা এন্টারপ্রাইজ। নির্মাণকাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুটি। এরপর দুই মাসের মাথায় ভেঙে পড়ে সেতুটি।
হাসাইল-বানারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কুদ্দুস মুন্সি বলেন, ‘এলাকার লোকজন বলে আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা ব্রিজ ঠিক করি না কেন? কিন্তু এসব কাজ তো আমাদের না; আমরা কী করব?’
হাসাইল বানারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হালদার বলেন, ‘এ বছরও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তবে সংস্কার করা যায়নি।’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলতে রাজি হননি টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন।
টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজেদা সরকার বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। সেতু তৈরি কিংবা ভেঙে যাওয়ার সময় আমি এখানে দায়িত্বে ছিলাম না। বন্যায় পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়েছিল।
‘সেতুর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’