বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর্মসৃজন প্রকল্প: অসহায় শিক্ষকও পাননি পুরো মজুরি

  •    
  • ৫ আগস্ট, ২০২১ ১৯:৪৯

স্থানীয় এমপি বলেন, ‘একজন শিক্ষক কতটুকু অসহায় হলে শ্রমিকের কাজ করতে পারেন। আর তাদের ন্যায্য মজুরি জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঘৃণিত। শুধু এসব শিক্ষকদের নয়, সেখানে বেশিরভাগ উপকারভোগীর কাছ থেকে একইভাবে চার হাজার করে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে।’

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আট বছর ধরে বিনা বেতনে ছড়িয়েছেন শিক্ষার আলো।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। টিউশনও বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম বিপাকে পড়েন নুরুল ইসলামসহ ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

আত্মমর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে একপর্যায়ে নুরুল ইসলামসহ চার শিক্ষক কাজ নেন সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে।

অভিযোগ উঠেছে, এ প্রকল্পে মাটি কাটার সামান্য মজুরির পুরোটাও পাননি তারা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা মজুরির ১৬ হাজার টাকার মধ্যে চার হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছেন।

প্রতিকার চেয়ে নুরুল ইসলাম জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিনের কাছে দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন এমপি মতিন।

শিক্ষক নুরুল ইসলামের দেয়া লিখিত অভিযোগ

অভিযোগে বলা হয়, ৮ বছর আগে দুর্গম চরাঞ্চল ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ১০ শিক্ষক নিয়ে ‘দৈ খাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ গড়ে তোলেন নুরুল। তখন থেকে ওই শিক্ষকরা বিনা বেতনে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা।

করোনা পরিস্থিতিতে সব বন্ধ হয়ে গেলে নুরুলসহ বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিলেন। বাধ্য হয়েই সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ নেন তারা।

এতে আরও বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে দুই ধাপে ৮০ দিন কাজ করেন তারা। ২০০ টাকা মজুরি হিসাবে জনপ্রতি তাদের ১৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। গত ৩০ জুলাই ওই ইউনিয়নে শ্রমিকদের মজুরির টাকা বিতরণ করা হয়।

নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মজুরির টাকা নিয়ে বের হতেই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের প্রতিনিধি আলী হোসেন, ইউসুফ আলী ও আয়নাল হক মৃধা বারান্দা থেকে প্রত্যেক উপকারভোগীর কাছ থেকে জোর করে চার হাজার টাকা নিয়ে নেন।

ওই সময় তিনিসহ অন্য শিক্ষকরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে নানা হুমকি দেয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর নির্দেশে টাকা তোলা হচ্ছে জানালে বাধ্য হয়ে তিনিসহ শিক্ষক মনসুর আলী, শাহীন আলম, শহিদুল আলম ও শহিদুল ইসলাম তাদের মোট ২০ হাজার টাকা দেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে কল করে তাকে গালিগালাজ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনার পর প্রতিকার চেয়ে তিনি জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি সদস্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘একজন শিক্ষক কতটুকু অসহায় হলে শ্রমিকের কাজ করতে পারেন। আর তাদের ন্যায্য মজুরি জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঘৃণিত।

‘শুধু এসব শিক্ষকদের নয়, সেখানে বেশিরভাগ উপকারভোগীর কাছ থেকে একইভাবে চার হাজার করে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাই। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার সুপারিশ করব।’

এ বিভাগের আরো খবর