তিন দিন আগে বিয়ে হয় সুমি ও মামুনের। কথা ছিল, কয়েক দিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে বউকে নিয়ে আসা হবে শ্বশুরবাড়ি।
সুমি স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি ফিরলেন ঠিকই, তবে এই ফেরায় ছিল না কোনো আনন্দ। নৌকায় স্বজনদের মরদেহ নিয়ে ফিরতে হয়েছে এই নবদম্পতিকে।
বর-বউ আনতে যাওয়ার সময় বজ্রাঘাত কেড়ে নিয়েছে ১৬ বরযাত্রীসহ ১৭ জনের প্রাণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাকার দুড়াউড়ি ঘাট এলাকায় বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বরের মামা মাইদুল ইসলাম জানান, ১ আগস্ট পাকা ইউনিয়নের সুমির সঙ্গে বিয়ে হয় নারায়ণপুর ইউনিয়নের মো. মামুনের। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ৫০ জন বরযাত্রী নারায়ণপুর আলীনগর ঘাট থেকে নৌকায় রওনা দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছান পাকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাকার দুড়াউড়ি ঘাটে।
মাইদুলসহ একে একে সবাই নামতে থাকেন ঘাটে। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে কয়েকজন দৌড়ে কনের বাড়ি চলে যান। প্রায় ২০ জন ঘাটের একটি টিনের ছাউনিতে আশ্রয় নেন। ওই টিনের ছাউনির ওপর বজ্রপাত হলে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বাকি তিনজন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাকিব আল রাব্বি নিউজবাংলাকে জানান, মৃতদের মধ্যে পাঁচজন নারী। মরদেহ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
বজ্রপাতে মৃতদের মরদেহ নৌকায় নিয়ে ফেরেন স্বজনরা
ছেলে মো. সজীবেরসহ ১৩ জনের মরদেহ একটি নৌকায় নিয়ে ফেরেন মামুনের চাচা দুরুল হুদা। আরেকটি নৌকায় বরের খালা ল্যাচন বেগম ও মামি টকিয়ারা খাতুনের মরদেহ নিয়ে ফেরেন নবদম্পতি। আরেকটি নৌকায় নেয়া হয় আরেক মৃত আত্মীয়র দেহ।
বরযাত্রীদের বাইরে যিনি মারা গেছেন তিনি হলেন উপজেলার পাকা গ্রামের মো. রফিক। তার মরদেহ আত্মীয়রা নিয়ে গেছেন।
মামুনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি কবর খোঁড়া শেষ। চলছে দাফনের প্রস্তুতি।
একই সঙ্গে বাবা মো. শরীফুল ও এতজন স্বজন হারিয়ে নির্বাক মামুন। তার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা বলা যায়নি।
পাশেই কাঁদছিলেন চাচা দুরুল হুদা। তিনি জানান, বজ্রপাতের পর আশপাশের লোকজন বলেছিল মুখে ফুঁ দিলে ছেলে হয়তো আবার শ্বাস নেবে। বারবার চেষ্টা করেছেন ছেলের মুখে ফুঁ দিয়ে তাকে আবার বাঁচিয়ে তোলার কিন্তু ছেলে আর ফেরেনি।
এ দুর্ঘটনায় আহত তিনজনের চিকিৎসা চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে। তাদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।