বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডে রোগীদের শয্যা দখল নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার জন্য যখন রোগীর লাইন, তখন সুস্থ হওয়া রোগীরা আইসিইউ ছাড়তে চান না। তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে নিতে চাইলে চিকিৎসক, নার্সদের মারধরের হুমকি দেয়া হয়, ভাঙচুরও করা হয়।
সুস্থ রোগীকে আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করতে না পেরে পুলিশ এবং পরে বরিশাল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপও নিতে হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, যার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো রয়েছে, সেই রোগীও আইসিইউ শয্যা দখল করে বসে রয়েছেন। কোনোভাবেই তাদের বুঝিয়ে নামানো যাচ্ছে না।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক বলছেন, আইসিইউ শয্যা দখল নিয়ে ‘মাস্তানি’ চলে। নেতার লোকজন পরিচয় দিয়ে দখল করে রাখা হয় বেড।
হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে ২৬টি আইসিইউ শয্যা এখন চালু রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ জন রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-এর ওপরে থাকলেও তারা আইসিইউ ছাড়তে চাইছেন না। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত করোনা ইউনিটের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে ঝামেলা হচ্ছে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে।
নগরীর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন ২৫ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসিইউ ওয়ার্ডের ৫নং শয্যায় এবং মো. অপু ৪নং শয্যায় ভর্তি হয়েছেন। তবে তারা সুস্থ। একইভাবে ৩নং ও ৭নং শয্যার রোগী সুস্থ হয়েও ছাড়ছেন না।
একজন নার্স জানান, আইসিইউতে রাখার পর যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো হয়ে যায়, অর্থাৎ ৯০-এর ওপরে চলে যায়, তাদের পরে সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পুরো বিষয়টি তাদের বোঝানো হলেও তারা বুঝতে চান না। জোর করে আটকে রাখেন শয্যা, আর এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই মারতে পর্যন্ত আসেন রোগীরা।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে হাসপাতালের পরিচালক বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ আসার খবরে অনেকে সরে পড়েছেন।
‘আমাদের শুধু বিরক্ত করে চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটায় কিছু লোক। যাদের চিকিৎসা দরকার, তাদের আমরা সবটুকু দিয়ে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। যে রোগীর আইসিইউ শয্যা দরকার তাকে তো আর আমরা সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠাই না। এটাই কেউ বুঝতে চায় না।’
হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কীভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাব, সেটাই চিন্তার বিষয়। এর মধ্যে করোনা ইউনিটে আইসিইউ বেড দখল নিয়ে ঝামেলা লেগেই রয়েছে। আমার কাছে ফোন আসতেই থাকে। মানুষের তো বোঝা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী অপেক্ষায় থাকেন, সেখানে এমনভাবে দখল করে রাখলে অন্য রোগীরা সমস্যার মধ্যে পড়েন।
‘মাস্তানি করা হয় সেখানে। ডাক্তার-নার্সদের হুমকি-ধমকিও দেয়া হয়। এর মধ্যে আমাদের একটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাও ভাঙচুর করা হয়েছে এই দ্বন্দ্বে। শিগগির আমরা কঠোর কোনো অবস্থানে যাব।’
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘করোনা ইউনিটে যারা চিকিৎসার জন্য যান, তারা প্রায় সবাই মুমূর্ষু অবস্থায় থাকেন। এই হাসপাতালে শুধু বরিশালের ৬ জেলা নয়, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ থেকেও প্রচুর রোগী এসে ভর্তি হন। কতটা হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে, সেটা বুঝতে পারছি। এর মধ্যে করোনা ইউনিটে আইসিইউ বেড দখল নিয়ে বিড়ম্বনার কথা শুনেছি।
‘গভীর রাতেও এমন খবর পেয়েছি। ডাক্তারদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, বাইরে বের হলে মারা হবে। এমন কেন হবে? ডাক্তাররা তো চেষ্টা করছেন তাদের সাধ্যমতো এই সংকটের মধ্যেও।’
তিনি বলেন, ‘করোনা ইউনিটে আইসিইউ বেড দখল নিয়ে কোনো মাস্তানি চলবে না। যার লোকই হোক না কেন, এমন মহামারিতে এমন যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, যা করা দরকার তাই করা হবে।’