অবৈধভাবে টিকা দেয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বরখাস্তের নোটিশ দেয়া হয়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার খুরশীদ আলম জানান, অবৈধভাবে আগাম টিকা দেয়ার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হওয়ায় অভিযুক্ত রবিউল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য বিভাগ গঠিত তিন সদস্যের কমিটি সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে রবিউলকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদন জমা দেয়ার তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন আসিফ খান।
৩ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে আরও ৩৫ পৃষ্ঠাসহ মোট ৩৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তদন্ত কমিটির আরও দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থো সার্জারি) অজয় দাশ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) নুরুল হায়দার।
নির্দেশনা না মেনে অবৈধভাবে টিকা দেয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য।
তিনি বলেন, ‘কারও অনুমতি না নিয়ে টিকা প্রয়োগ করেন রবিউল। ওই এলাকায় ২ দিনে মোট ২ হাজার ৬০০ জনকে টিকা দেয়ার তথ্য পেয়েছে কমিটি। টিকাগ্রহীতাদের সম্মতিপত্র আমরা পেয়েছি।’
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির ওই সদস্য বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে টিকা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কার নির্দেশে টিকা দিয়েছে এ ব্যাপারে রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’
গত ৩০ ও ৩১ জুলাই পটিয়া উপজেলার শোভনদণ্ডী এলাকায় নিবন্ধন ছাড়াই প্রায় ২ হাজার ৬০০ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার ঘটনা ঘটে। শোভনদণ্ডীর আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয় ও শোভনদণ্ডী ডিগ্রি কলেজে স্থানীয় মানুষকে জড়ো করে এসব টিকা দেয়া হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও নিজের অগোচরে এসব টিকা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা সব্যসাচী নাথ।
এ ঘটনায় শনিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিউল হোসেন বলেন, ‘এমপি সাহেব (পটিয়ার সাংসদ ও হুইপ শামসুল হক) বলেছেন ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য। তাই ব্যবস্থা করেছি। তবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো টিকা দেয়া হয়নি।’
কীভাবে টিকার ক্যাম্পেইন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে দিচ্ছি। আমরা তো সেবাই দিলাম। সেবামূলক কাজ করছি। ব্যবসা তো করিনি।’
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হুইপ শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, টিকাবাণিজ্য হয়নি।’
হুইপের নির্দেশে টিকা দেয়ার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে আমার নাম আসেনি। কাউকে আমি টিকা দিতেও বলিনি। এখন কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে বলে তার নামে মামলা করব।’