মশা নিধনে ফগিং মেশিনে নয়, স্প্রে করে ভেষজ ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গবেষকরা।
মঙ্গলবার সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে চবি গবেষকদলের সদস্য সচিব ড. ওমর ফারুক রাসেল গবেষোণার ফল উপস্থাপন করেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওষুধে মশা কেন মরছে না এবং কার্যকর ওষুধ বিষয়ে পরামর্শ নিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শরণাপন্ন হয়েছিলেন মেয়র রেজাউল করিম।
মশা নিধনে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করে ছয় সদস্যের গবেষকদল। ২২ জুন থেকে তারা কাজ শুরু করেন।
দুপুরে গবেষোণার ফল উপস্থাপনের সময় মেয়র রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপউপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে উপস্থিতি ছিলেন।
গবেষণায় উঠে আসে, চট্টগ্রাম নগরীর ৫৫টি স্পটের ১৫টিতে শতভাগ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রায় সব স্পটে কম-বেশি এডিস মশার উপস্থিতি আছে। এর বাইরেও জোবরা ও চবি মিলিয়ে ৬টি স্পটে পাওয়া গেছে ম্যালেরিয়া বহনকারী অ্যানোফিলিস মশা।
গবেষকদল পাঁচটি নমুনা ওষুধ থেকে একটি নির্বাচন করে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। এটি একটি ভেষজ ওষুধ। এক্ষেত্রে ফগিং মেশিন ব্যবহার না করে স্প্রে করার পরামর্শ দেন তারা।
ছয় সদস্যের গবেষক দলের আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। অন্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আব্দুল্লাহ মাসুদ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী।
সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল।
গবেষণায় সহায়তা করেন প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, ‘আমরা ৫টি নমুনাকে নমুনা ১-৫ দিয়ে নামকরণ করি। এ ক্ষত্রে দুইটি নমুনার ওষুধ আগে ব্যবহার করা হতো। নতুন করে আরও তিনটি আমাদের দেয়া হয়। পাঁচটি ওষুধ যাচাই করে আমরা একটি ওষুধ পাই, যা প্রাকৃতিক এবং শতভাগ মশা মারতে সক্ষম।’
তিনি বলেন, ‘ওষুধ প্রয়োগের ক্ষত্রে ফগিং মেশিন ব্যবহার না করে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি আমরা। ফগিং মেশিন দিয়ে এই ওষুধ ছিটালে কার্যকর হবে না। এছাড়া, মশা মারতে যে কীটনাশক ও কালো তেল ব্যবহার করা হয়, আমরা তা না করার পক্ষে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়।’
গবেষক দলের সদস্য সচিব ড. ওমর ফারুক রাসেল বলেন, ‘১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা আমরা পেয়েছি। স্পটগুলো হলো বাকোলিয়া, কল্পলোক আবাসিক, চকবাজার, সদরঘাট, পশ্চিম মাদারবাড়ি, পাহাড়তলি, সেগুনবাগান, সিডিএ মার্কেট, সাগরিকা, হালিশহর, দক্ষিণ কাট্টলি, চাঁদগাও আবাসিক, ডিসি রোড, চাক্তাই প্রাইমারি স্কুল।
‘যে ছয় স্থানে অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে তা হলো, জোবরা গ্রামের বখতিয়ার রোড, পশ্চিম পাড়া ও ফটিক বাড়ি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২ নম্বর গেট, সরকার কলোনি এবং পুরাতন শামসুর নাহার হল।’
তিনি জানান, রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে বিকল্প হিসেবে জৈব নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। সেগুলো হলো মাছ চাষ করে লার্ভা ধ্বংস, অণুজীব ব্যবহার করে লার্ভা ধ্বংস, উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে মাছ চাষ করে লার্ভা ধ্বংস করা।