নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে মাদ্রাসায় খাবার খেয়ে নিশান নূর হাদী নামের এক ছাত্রের মৃত্যু ও ১৭ জন অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় ছাত্ররা রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে নিশানসহ অন্যরা। পরে নিশানের মৃত্যুর হলে মঙ্গলবার বিকেলে তার চাচা আহসান উল্যাহ বেগমগঞ্জ থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা করেন।
এ মামলায় পুলিশ ওই মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক, তিন শিক্ষক ও কমিটির দুই সদস্যকে আটক করেছে।
তারা হলেন সোনাইমুড়ী উপজেলার ঘোষকামতা গ্রামের হাফেজ মো. দাউদ ইব্রাহীম, সুবর্ণচর উপজেলার মাওলানা মাইনুদ্দীন, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মাওলানা জহিরুল ইসলাম, হাতিয়া উপজেলার চর কৈলাশ গ্রামের হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান হাসান, বেগমগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামের হাফেজ বেলাল হোসাইন ও বেগমগঞ্জ পূর্ব একলাশপুর গ্রামের হাফেজ মো. ইসমাঈল।
মৃত নিশান উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে। সে ওই মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
এ ঘটনায় অসুস্থ ১৬ ছাত্রকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিফাত হোসেন নামে এক ছাত্রকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।
অসুস্থ ছাত্রদের স্বজনদের অভিযোগ, ওই খাবারে বিষ মেশানো হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মোজ্জামেল হোসেন, পারভেজ, আবদুর রহিম, আশিক, মেহেরাজ, শান্ত ও নুর হাসানসহ ১৬ ছাত্র জানায়, সোমবার দুপুরের দিকে মাদ্রাসায় ছাগলের মাংস রান্না হয়। দুপুরে আবাসিক বিভাগের ২০ ছাত্র ওই মাংস দিয়ে ভাত খায়। তখন মাংসে ঝোল কম ছিল।
এশার নামাজের পর একই মাংস দিয়ে ১৮ ছাত্র রাতের খাবার খায়। রাতে মাংসে ঝোল ছিল। এ ছাড়া মাংসে কিছুটা উটকো গন্ধ ছিল। মাংস মুখে নেয়ার পর মুখ অনেকটা তেতো হয়ে যায় এবং মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের সবারই পেটে ব্যথা ও বমি শুরু হয়।
মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক হাফেজ মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ছাত্রদের অসুস্থতার কথা শুনে স্থানীয় এক পল্লি চিকিৎসককে মাদ্রাসায় ডেকে আনা হয়। তিনি অসুস্থ ছাত্রদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এর মধ্যে অসুস্থ ছাত্র নিশানের মৃত্যু হয়। পরে দ্রুত অন্য ছাত্রদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, তাদের মাদ্রাসার আবাসিক বিভাগে প্রতিদিন ৭০ জন ছাত্র খাবার খায়। রাতে ১৮ জন খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যদের আর ওই খাবার দেয়া হয়নি।
ফেরদৌসী আক্তার, আমির হোসেনসহ হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্রদের অভিভাবকরা জানান, এর আগে ওই মাদ্রাসায় বাচ্চাদের খাবারে এ ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। দুপুরেও একই খাবার খেয়েছে বাচ্চারা, তখনও কোনো সমস্যা হয়নি।
তারা অভিযোগ করেন, রাতে খাবারের সঙ্গে কেউ বিষাক্ত কোনো দ্রব্য মিশিয়ে দিয়েছে, না হলে একসঙ্গে খাবার খাওয়া সব বাচ্চার এ সমস্যা হতো না।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে মূল রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান তারা।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে নিশানকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে ভর্তি ১৭ ছাত্রের মধ্যে রিফাত হোসেন নামে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ১৬ জনের অবস্থা উন্নতির দিকে। তবে শঙ্কামুক্ত কি না, ২৪ ঘণ্টার আগে তা বলা যাচ্ছে না।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। রাতের ওই খাবারের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নিশানের চাচার করা মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার জানান, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।