রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর বহুমুখী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভয়াবহ ভাঙনে মুহূর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী রক্ষায় ব্যবহৃত হাজার হাজার ব্লক।
ভাঙতে ভাঙতে রাজবাড়ী শহর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেলে দায় কে নেবে- এমন প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস।
দফায় দফায় ভাঙনে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের পাশাপাশি বিরাজ করছে আতঙ্ক।
মঙ্গলবার সকালে পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সংসদ সদস্য সালমা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ী শহর রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক তদারকি এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
তার সঙ্গে ছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাসসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম ও আব্দুল আহাদ।
প্রকৌশলীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এমপি সালমা বলেন, ‘নদীভাঙন প্রতিরোধে আমরা সতর্ক আছি।’
উপজেলা চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস এ সময় বলেন, ‘যদি এরই মধ্যে রাজবাড়ী শহর ভেঙে যায়, এর দায় কে নেবে।’
এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ আস্থা নিয়ে বলছি, সেটা হতে দেব না। নদীর গতিবিধি, মাটির ধরন সবকিছু পরীক্ষা করেই প্রকল্প তৈরি এবং বাজেট করা হয়।’
এই প্রকল্পে কি সেটা মানা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প ২০১৭ সালের, ২০২১ সালে নদীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এরই মধ্যেই আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছি।’
রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ জানান, ২০১৮ সালে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মার তীর সংরক্ষণে সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাজটি খুলনা শিপইয়ার্ড পেলেও তারা ডিবিএল নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করে। ২০২০ সালে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সম্ভব হয়নি।
এরই মধ্যে ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ।
নদীর প্রকৃতি ও আচরণে সিমেন্টের ব্লক, জিও ব্যাগ কোনো কাজে আসবে না বলে জানান অনেকে।
স্থানীয় লোকজন জানান, যদি বালির বস্তা ফেলেই নদীর তীর রক্ষা করা হয়, তাহলে এত টাকার প্রজেক্টের কী দরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, নদীর গভীরতা অনুসারে সাইড ওয়াল হয়নি। ব্লক ডাম্পিং যে অনুসারে করা হয়, সেটা হলে এই ভাঙন হতো না। প্রয়োজন ছিল ঘূর্ণায়মান এলাকায় স্পার্ক করে বড় ব্লক দেয়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহর রক্ষা বাঁধের কাজে ত্রুটি রয়েছে। ফলে গোদার বাজারের একটু উজানে নদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা কাজের ব্লক দুই মাস না যেতেই ধসে গেছে।
তারা আরও জানান, যেভাবে ধস শুরু হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা দ্রুত সংস্কার না করা হলে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। রাজবাড়ী শহর পড়বে হুমকির মুখে।