লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে রথিপুর কুঠির পাড় এলাকায় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একজনের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও সুবিচার না পেয়ে সোমাবার দুপুরে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার কাছে অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগীর পরিবার।
পরে স্থানীয় শেখ রাসেল স্মৃতিসৌধ পাদদেশে বিচার চেয়ে ঘণ্টাব্যাপী মৌন সমাবেশ করে ভূক্তভোগী ও তার পরিবার।
অভিযোগে জানা যায়, সদর উপজেলার রতিপুর গ্রামের সুমন্ত চন্দ্র বর্মন এই কাজ করেছেন। তিনি এর আগেও এলাকায় যৌন হয়রানি করেছেন।
পরিবারটি জানায়, গত ২২ জুন মাসির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নিজ বাড়ি থেকে তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সেই গৃহবধূ। বিকেলে তিনি ঘরে অবস্থান করার সময় সুমন্ত চন্দ্র রায় পেছন থেকে জাপটে ধরেন তাকে।
সেই গৃহবধূ সে সময় চিৎকার করলে তার শাশুড়ি ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে সুমন্ত চন্দ্র পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী পরিবার প্রথমে মুখ খুলতে রাজি না হলেও পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। সুমন্ত আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করেন।
পরে গত ১৩ জুলাই বুধবার লালমনিরহাট সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় গৃহবধূর পরিবার। আর ১৮ জুলাই সদর থানা রেকর্ড করে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘এতদিন সম্মানের ভয়ে চুপ ছিলাম, তবে আর না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
কর্মসূচিতে উপস্থিত স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘সুমন্ত আমার স্বামীর পরিচিত ও ভাসুর হওয়ায় আমার বাড়িতে যাওয়া আসা করত। আমি গোসল করছিলাম, সে সময় সুমন্ত এসে আমার গোসল করা দেখে এবং কুনজরে তাকিয়ে থাকে। এই সুমন্ত প্রায় প্রতিদিন একটা না একটা বাড়িতে ঢুকে আর মহিলাদের মধ্যে যাকে পায় তার উপরই যৌন নির্যাতন করি বেড়ায়।’
আরেক নারী বলেন, ‘সুমন্ত একদিন আমার ঘরে হঠাৎ প্রবেশ করে। ঐ সময় বাড়িতে শাশুড়ি ছাড়া আর কেউ ছিল না। আমি ঘরের বাহিরে ছিলাম হঠাৎ ঘরে ঢুকে দেখি সুমন্ত বসে আছে। পরে আমাকে জাপটে ধরার চেষ্টা করলে ভয়ে আমি সেখান থেকে সটকে পড়ি।’
তিনি বলেন, ‘টাকা থাকায় এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানরা তার বিচার করে না। পুরো এলাকার মহিলাদের খালি শারীরিক নির্যাতনই করে চলছে।’
আরেক নারী বলেন, ‘উয়ার টাকা ম্যালা সবায় খালি ওর টাকায় খায় কিন্তু বিচার হয় না। হামরা বিচার চাই সুমন্তের।’
একই এলাকার বৃদ্ধ মনোরঞ্জন বলেন, ‘থানাত মামলা হইছে পুলিশও যায় না। তারে জন্য হামরা আজ সোমবার এসপির কাছত আচ্চি।’
একই এলাকার আরও এক বৃদ্ধ সুবল চন্দ্র বলেন, ‘ওমার (তার) টাকা পয়সা আছে। ওমার কাও বিচার করে না। এলাকাবাসীক বিচার দিছি, তার কিছু হলো না। শেষ পর্যন্ত থানাত বিচার দিলাম থানাও এখন পর্যন্ত গেল না।’
আরেক এলাকাবাসী বিষ্ণু পদো বলেন, ‘আমরা গরিব হতে পারি। এজন্য কি আমরা কোন ফল পাব না? এলাকায় যখন বিচার হলো না, তাই আমরা থানায় মামলা দিছি, কিন্তু কোনো বিচার পাইলাম না। দেখি যে দেশে বিচার নাই।
‘আবার বাদীর এর মধ্যে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ জন্য আজ এসপি স্যারের কাছে আসনো দেখি ওনি কী করেন, বিচার আছে কি না।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহা আলম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, মামলা রেকর্ডও করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, ‘আমি বিষয়টি এতদিন শুনিনি। তবে আজ ভুক্তভোগীর পরিবার মামলার কপি আমাকে দিয়েছে। এ রকম একের পর এক যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অথচ বিচার পাবে না, এটি হতে পারে না। আমি বিয়ষটি দেখছি।’