কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নে কর্মসৃজনের ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ৮৮৬ শ্রমিকের পাওনা থেকে চার হাজার টাকা করে কেটে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, শ্রমিকদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর বিতরণ মাঠে ভূরিভোজের আয়োজনও করা হয়।
ইউনিয়নের চরদুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার সকালে কর্মসৃজনের ওই টাকা বিতরণ করা হয়। টাকা কেটে নেয়ার ঘটনায় ওই সময় শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও তাদের লোকজনের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে জানা যায়, সাহেবের আলগা ইউনিয়নে ২০২০-২১ অর্থবছরে কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে ৮৮৬ শ্রমিক রাস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে মাটি কাটেন। তারা দুই দফায় ৮০ দিন কাজ করেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা করে এসব শ্রমিকের পাওনা হিসেবে ১ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা তোলা হয়।
শ্রমিকরা জানান, শনিবার পাওনা টাকা বিতরণের শুরুতে শ্রমিকপ্রতি ১৬ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন খরচের কথা বলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ৪ হাজার টাকা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত জানান। তারা না মানায় সকাল ৮টায় টাকা বিতরনের উদ্যোগ কয়েক দফা বন্ধ হয়ে যায়।
তারা প্রতিবাদ জানালে ওই সময় ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক আলী মন্ডল, ইউপি সদস্য ও তাদের লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে উলিপুর থানা থেকে আসা আট পুলিশ সদস্য এবং নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা তাদের থামান।
তারা অভিযোগ করেন, অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা দুপুর ১২টার দিকে টাকা বিতরণ শুরু করেন। তারা ১৬ হাজার টাকা করে দিলেও বিতরণ কেন্দ্রের পাশেই অবস্থান নেয়া চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের লোকজন তাদের কাছ থেকে চার হাজার টাকা করে কেটে নেয়।
অভিযোগ উঠেছে, টাকা বিতরণের সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজুদৌলা পাশের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তিনিও এর সঙ্গে যুক্ত। টাকা বিতরণ শেষে তিনিসহ চেয়ারম্যান, মেম্বার, বিতরণকারী, পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজন শ্রমিকদের অর্থে ভুরিভোজ করেন।
কানচু মিয়া, পরীভানু, আমিরজান ও সোনাভানু নামে চার শ্রমিক অভিযোগ করেন, তারা ৮০ দিন কাজ করেছেন। চেয়ারম্যান-মেম্বার তাদের ১৬ হাজার টাকা না দিয়া ১২ হাজার দিয়েছেন। তারা এর বিচার চান।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের জবেদা খাতুন বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও মেম্বার আমাকে জোর করে ১২ হাজার টাকা দিল। আমি আল্লার কাছে বিচার দিয়েছি।’
চার হাজার টাকা কেটে নেয়ার বিষয়টি শুধু সাহেবের আলগা ইউপি সদস্য কামাল হোসেন স্বীকার করেছেন। চেয়ারম্যান, পিআইওসহ অন্যরা টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
ইউপি সদস্য কামাল জানান, বিভিন্ন খরচ বাবদ এই টাকা নেয়া হয়েছে।
সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের লোকজন ও পিআইও টাকা বিতরণ করেছেন। টাকা কম দেয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদৌলা বলেন, ‘টাকা বিতরণের জন্য ইউএনও সাহেব আমাকে এবং ব্যাংকের ম্যানেজারকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন। টাকার অংক বেশি থাকায় পুলিশের সহযোগিতা নেয়া হয়।’
শ্রমিকদের টাকা কেটে নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি উপকারভোগীদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছি, তাই যারা সুবিধা করতে পারেননি তারাই টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অপপ্রচার করছে।’
ভুরিভোজের বিষয়ে বলেন, ‘দুর্গম এলাকায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমাদের খেতে হয়েছে।’
নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে উলিপুর থানা পুলিশ ও তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থেকে বিতরণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে জান্নাত রুমি বলেন, ‘শ্রমিকদের হাতে টাকা দেয়া হয়েছে। এরপর তারা কী করেছেন সেটা আমি জানি না।
‘চার হাজার টাকা কাটার বিষয়ে কোনো উপকারভোগী আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’