শরীয়তপুরের জাজিরার রঞ্জন ছৈয়ালকান্দি গ্রামের শুক্কুরজানের স্বামী পাঁচ বছর আগে চিরবিদায় নিয়েছেন। তার সন্তান নেই। বুকের চাপা কষ্ট নিয়ে স্বামীর ভিটাতেই ছিলেন। সেই সম্বলটিও দুই দিন আগে পদ্মাগর্ভে চলে গেছে। জীবনসায়াহ্নে আশ্রয় হয়েছে অন্যের জমিতে। হারিয়ে যাওয়া সেই স্মৃতি শুক্কুরজানকে বারবার নিয়ে যায় পদ্মাপাড়ে। তাকিয়ে থাকেন সর্বগ্রাসী নদীর দিকে, আর দুই চোখ বেয়ে ঝরে অশ্রুধারা।শুক্কুরজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হে জীবন থিক্যা যাওনের পর বাড়িডারেই লইয়্যাই বাইচ্চা ছিলাম। দিন দুই অইব সব নদীত লইয়া গেল। যদি ইট্টুহানি থাকত, তাইলে হেইয়া লইয়াই থাকতাম। গুইরা গুইরা রাইত কাডাই। আমার অহন ঠাই-ঠিকানা নাই। জীবনের সব শ্যাষ অইয়া গেল।’
পূর্ব নাওডোবা, বিলাশপুর, পালেরচর আর বড়কান্দি গ্রামে হঠাৎ আবার দেখা দিয়েছে পদ্মার তীব্র ভাঙন। শুক্কুরজানের মতো জাজিরায় পদ্মাতীরের শতাধিক পরিবারের ঠিকানা হয়েছে অন্যের জায়গায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, দুই সপ্তাহ আগে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয় জাজিরায়। ভাঙনের শিকার হয় পূর্ব নাওডোবা, বিলাশপুর, পালেরচর ও বড়কান্দি ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ১১৩টি পরিবার। আতঙ্কে শতাধিক পরিবার এরই মধ্যে চলে গেছে অন্যত্র। হুমকিতে পড়েছে নদীর ১৪ কিলোমিটার এলাকায় বসবাসকারী কয়েক হাজার পরিবার।ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে এলাকার মানুষ নানা কর্মসূচি পালন করছে।
ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে শরীয়তপুরের জাজিরার বাসিন্দারা
রোববার বেলা ১১টার দিকে বড়কান্দি ইউনিয়নের রঞ্জন ছৈয়ালকান্দি গ্রামে পদ্মাতীরের পাঁচ শ মানুষ জড়ো হয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানান।
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, ত্রাণ নয়, ভাঙন রোধে চাই টেকসই রক্ষাবাঁধ।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আমিনুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘বছরের পর বছর নদী ভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত, কেউ দেখার নেই। আমরা অসহায়ভাবে বসবাস করছে। প্রতিদিনই ভাঙছে। কোথায় যাব জানি না। ত্রাণ চাই না, চাই বেড়িবাঁধ। ভাঙন রোধের দাবিতে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেব।’
পাতালিয়াকান্দি গ্রামের কৃষক মাসুদ শেখ বলেন, ‘আমার ৪ শতাংশ জমির পাট নদীর ভাঙ্গনে শ্যাষ। এহনও ভাঙতাছে। কৃষি কাজ করইরা খাই। এই জমি না থাকলে না খাইয়া মরতে অইব।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব বলেন, ‘এ বছর জাজিরায় ভাঙন বেড়েছে। শুরু থেকেই জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে তীর রক্ষার জন্য প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে জাজিরার ওই সব এলাকা ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে।’