‘আমার বাড়ি গাইবান্ধার চর এলাকায়। হুট কইরা পরশু দিন আত (রাত) ৭টার সময় অপিস থাইকা মেসেজ দিছে যে ১ তারিখ অপিস খোলা। যে ভাড়া ৩০০ ট্যাকা, সেই ভাড়া ২০০০ ট্যাকা দিয়া আইছি। বাইপাইল আইসাও গাড়ি পাই নাই। আইজকা অ্যাবসেন (অনুপস্থিত)। ট্যাকার ট্যাকাও গেলে, অপিসও অ্যাবসেন হয়্যা গেল।’
বিড়ম্বনার যাত্রা শেষেও কারখানাতে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে না পেরে কাঠগড়া এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক বিজলী বেগম আক্ষেপের সুরে কথাগুলো জানালেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার যাওয়ার তো ব্যবস্থা ঠিকই কইর্যা দিলো। আসার ব্যবস্থা কইর্যা দিলো না ক্যা? সরকার জানে না, শ্রমিকরা দ্যাশে পোলাপান, বাপ-মায়ের সঙ্গে ঈদ করবো। মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়াও অদ্যা ঘাটাত আইসা অপিস মিস হলো।’
হুট করে পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে ঈদে গ্রামে গিয়ে বিপাকে পড়া পোশাকশ্রমিকরা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়ায় যোগ দিতে ছুটছেন কর্মস্থলে।
শনিবার থেকেই সাভার শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের দল বেঁধে আসতে দেখা গেছে। রোববার ভোরেও একই চিত্র ছিল এখানকার পথে পথে। বেশি ভাড়ায় তড়িঘড়ি করে পৌঁছলেও অনেকেই কারখানায় কাজে যোগ দিতে পারেননি।
রোববার ভোর থেকেই সাভারে ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের বিভিন্ন স্থানে বাড়িফেরত শ্রমিকদের গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ট্রাক, মাইক্রোবাস, কাভার্ডভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দূরের পথ পাড়ি দিয়ে নেমেও পাচ্ছেন না স্থানীয় গণপরিবহন।
গার্মেন্টসে কাজে যোগ দেয়ার জন্য পথে এত বিড়ম্বনা ভুগেও কর্মস্থলে যেতে না পারায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এসব শ্রমিক।
শিমুলতলা এলাকার নাভা নিট কম্পোজিট কারখানার শ্রমিক মোহন মিয়া বলেন, ‘গতকাইলকা রাইতে টাঙ্গাইল মধুপুর থাইকা আইছি। এ্যামনে সময়ে যে ভাড়া ২৫০ ট্যাকা, গাড়ি না পাইয়া ৫০০ ট্যাকা সিএনজি আর ৪০০ ট্যাকা রিকশা ভাড়া দিয়া বাইপাইল আইতে হইছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইজকা ফ্যাক্টরিতে সবাই এখনো আসে নাই। ধরেন ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জন শ্রমিক কাজে আইছে। আগে য্যামন কারখানায় ঢুকছি আইজকাও একই রকম। নতুন কোনো নিয়ম দেখি নাই।’
জিরাবো এলাকার সিলভার অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক রিপন কান্তি বলেন, ‘আগের যেমন পরিবেশ ছিল, সেভাবেই আজকেও ঢুকছি। সাবান দিয়ে হাত ধুলেও আগের মতোই গাদাগাদি করে আমরা কারখানায় ঢুকছি। আমাদের এখানে তাপমাত্রা মাপার কোনো মেশিনও নাই।’
পুরাতন ইপিজেডের গোল্ডটেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের কারখানায় ৪ হাজারের মতো শ্রমিক। এখনো অনেক শ্রমিক আসতে পারে নাই। ঈদের আগে আমরা যেভাবে সাবান-পানি দিয়া হাত ধুয়ে ঢুকছি, আজকেও ওই রকম। নতুন কোনো সিস্টেম নাই।’
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে দশ দিন কারখানা বন্ধ ছিল, মালিকপক্ষ চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থাগুলো উন্নত করতে পারত। আগে তারা বলেছেন, এই কাজগুলো করতে গেলে উৎপাদনের ক্ষতি হবে। এই সময়ের মধ্যে তারা এগুলো করেন নাই। অর্থাৎ মালিকদের সদিচ্ছার অভাব স্পষ্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর নতুন করে গতরাতে বিজিএমইএর সভাপতির নির্দেশনা দেয়ার তো কোনো মানে হয় না। এই দশ দিনে যারা কারখানার স্বাস্থ্য নিরপত্তা নিশ্চিত করতে পারে নাই, তারা গভীর রাতে দেয়া এই নির্দেশনা ২ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে করবে? এটা সরকারকে বোঝানোর জন্য এবং ভালো হওয়ার জন্য এগুলা করতেছে।’