লঞ্চ চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এর আগেই ঢুকতে হবে ঢাকায়। তাই দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী লঞ্চে তিলধারণের জায়গা নেই। রোববার ভোর থেকে হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়েছে লঞ্চ।
নৌযানে চড়তে না পেরে অনেক ঘাটেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় আছেন অসংখ্য মানুষ।
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে রোববার সকালে দেখা গেছে যাত্রীর ঢল। তাদের অনেকেই ভোর থেকে অপেক্ষা করেও লঞ্চে চড়তে পারেননি।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে ঢাকাগামী যুবক ইলিয়াস হোসেন জানান, চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ভিড় ঠেলে ঢাকা যাওয়া লাগছে। এতো মানুষ এক সঙ্গে লঞ্চে উঠছে যে চাইলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। নিজ সুরক্ষায় মাস্কই একমাত্র ভরসা তার।
আরেক যাত্রী তারেক হোসেন জানান, চাকরিতে যোগ দিতেই হবে। তাই ঝুঁকি জেনেও গাদাগাদি করে লঞ্চে উঠছেন। করোনা কিংবা দুর্ঘটনার চেয়ে চাকরির চিন্তা এখন বেশি।
লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিল্পব সরকার বলেন, ‘ঘাটে যে পরিমাণ যাত্রী রয়েছে, সে পরিমাণ লঞ্চ নেই। তাই কিছুটা বাড়তি যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে হচ্ছে।
‘অল্প সময়ের জন্য লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়ায় সবাই এক সঙ্গে ঘাটে আসছে। তবে আমরা সকল যাত্রীদের স্ব্যাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের নির্দেশনা মেনে আজ দুপুর ১২ পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করবে।’
ঘাটে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা দায়িত্বে আছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক কায়সারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাটে পর্যাপ্ত লঞ্চ না থাকায় যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে, তারপরেও অনেক যাত্রী তা মানছেন না।’
তিনি জানান, ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ৮টি লঞ্চ চাঁদপুর থেকে ছেড়ে গেছে। প্রতিটিই ছিল যাত্রীবোঝাই। দুপুর সাড়ে ১১টায় আরেকটি লঞ্চ ঘাটে ভিড়বে।
ভোলার ইলিশাঘাট ও চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট থেকে সকালে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে ৮টি লঞ্চ। এছাড়া ইলিশাঘাট থেকে লক্ষীপুরের মজুচৌধুরীর ঘাটের উদ্দেশ্য দুইটি সিট্রাক ও দুইটি লঞ্চ ছেড়ে যায়।
এসব ঘাটের যাত্রীরা ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন।
ঢাকাগামী এম ভি দোয়েল পাখি-১ এর যাত্রী সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘লঞ্চে দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। অথচ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ২৫০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা নিতেছে। এমন হইলে কেমনে হইবো। এইডা তো গরিব মারা ব্যবসা শুরু করছে।’
এম ভি কর্ণফুলী-১০ লঞ্চের যাত্রী মো. রুবেল অভিযোগ করেন, ‘চাপ হবে ভেবে সরকারের ঘোষণা পাওয়া পরপরই গতকাল (শনিবার) রাতে লঞ্চঘাটের উদ্দেশে চলে আসি। ঘাটে রাত ২টায় এসেও সিট পাইনি। বারান্দায় সিট করতে হইছে।’
ভোলা-ঢাকা নৌপথে কর্ণফুলী-১০ লঞ্চের ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিনের দাবি, বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই প্রতিটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। যদিও সে চিত্র সরেজমিনে দেখা যায়নি।
বরগুনা থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত দুইটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, হুট করে শনিবার রাতে গণপরিবহন চালুর ঘোষণা আসায় সব লঞ্চ নামানো যায়নি।
এই ঘাটেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
ঢাকাগামী আরিফুর রহমান বলেন, ‘ডেকে ৫০০, সিঙ্গাল কেবিনে ১৫০০ এবং ডাবলে ২৮০০ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ ডেকে ৪০০, সিঙ্গাল কেবিনে ১২০০ এবং ডাবলে ২৪০০ টাকা নিয়মিত ভাড়া।’
যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে এমকে শিপিং লাইন্সের বরগুনা ঘাট ব্যবস্থাপক এনায়েত হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাতেই আমরা জানতে পারি সাময়িক নৌযান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তড়িঘড়ি করে আমরা স্টাফদের খবর দিয়ে আজ লঞ্চ ছেড়েছি।
‘হুট করেই লঞ্চ ছাড়ার সিদ্ধান্তে স্টাফ সংকট পড়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। স্পেশাল ট্রিপের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে স্টাফ জোগাড় করা হয়েছে। এ কারণে ভাড়া সামান্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
তিনি জানান, যাত্রীর চাপে স্বাস্থ্যবিধি মানা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। তবে লঞ্চে ওঠার আগে মাস্ক পরা ও হাত ধোয়া নিশ্চিত করা হয়েছে।