বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বানভাসিদের দুর্ভোগ, বিরূপ আবহাওয়ার কবলে জেলেরা

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১৯:৫৩

বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বাড়িঘরে ফিরছেন কেউ কেউ। বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ। ঘরের বেড়া, চাল, খাবার, ওষুধ কিছুই নেই তাদের। গরু-ছাগল, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল সব ভেসে গেছে।

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত অব্যাহত আছে। বৈরী পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে যেতে পারছেন না।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে বন্যার পানি ধীরে নামায় দুর্ভোগ বাড়ছে। বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলের হাটবাজার ও রাস্তাঘাট তলিয়ে আছে। বানভাসিদের রাতদিন কাটেছে নৌকায়।

জেলা প্রশাসন জানায়, কক্সবাজারের ৯ উপজেলায় ৭১ ইউনিয়ন ও ৪ পৌরসভার মধ্যে ৪১ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ৪১৩টি গ্রামের ৫৫ হাজার ১৫০ পরিবারের আড়াই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজারে বন্যাকবলিত এলাকায় বাড়ছে দুর্ভোগ। ছবি: নিউজবাংলা

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার উপকূলে নোঙর করে পড়ে আছে মাছ ধরার ট্রলার।

জেলেরা জানান, উত্তাল সাগরে বাতাসের বেগ বাড়ায় মাছ ধরতে যাওয়া যাচ্ছে না, আর যারা গেছেন তারাও উপকূলে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

কক্সবাজারে বন্যায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ তিন কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করছে জেলা প্রশাসন। এসব প্লাবিত এলাকায় ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ছয় হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ৫৮ গ্রাম, রামুর ছয় ইউনিয়নের ৩৫ গ্রাম, চকরিয়ার ১৫ ইউনিয়নের ১০০ গ্রাম, পেকুয়ার দুই ইউনিয়নের ৬ গ্রাম, মহেশখালীর ছয় ইউনিয়নের ৩৮ গ্রাম, উখিয়ার দুই ইউনিয়নের ১২০ গ্রাম, টেকনাফের চার ইউনিয়নের ৫৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজারে বন্যাকবলিত এলাকায় বাড়ছে দুর্ভোগ। ছবি: নিউজবাংলা

বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বাড়িঘরে ফিরছেন কেউ কেউ। বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ। ঘরের বেড়া, চাল, খাবার, ওষুধ কিছুই নেই তাদের। গরু-ছাগল, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল সব ভেসে গেছে।

বানভাসিদের আয়রোজগার বন্ধ। নিরুপায় হয়ে পড়েছেন তারা। রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও সদরের ঝিলংজায় বন্যার্তরা এসব কথা জানান।

তারা জানান, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও তারা পড়েছেন বিপদে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়ি, উঁচু স্থানে। অনেকের রাত-দিন কাটেছে নৌকায়। হাটবাজার ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

দুর্গতরা জানান, এবারের বন্যায় রোপা আমন ধানের আবাদ ও সবজিক্ষেত ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল কম দামে বেচে দিয়েছেন কেউ কেউ। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে খাওয়ার পানির সংকট।

যেসব টিউবওয়েল জেগেছে সেগুলো দিয়ে পানি ওঠে না। নদী ও খাল-বিলের পানিতে আবর্জনা ভাসছে। পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে খাওয়ার উপযোগী করার উপায় নেই।

বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের সঙ্গে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ।

বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। অন্ধকারে আছেন বানভাসিরা।

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির শাহাদত হোসেন বলেন, ‘পানি কমতে শুরু করায় ঘরে ফিরেছি। কিন্তু বাড়িতে বসবাসের উপায় নাই। ঘরের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে গেছে। বেড়া পানিতে বিলীন। সব নতুন করে বানাতে হবে। কিন্তু হাতে কোনও টাকাপয়সা নাই।’

শাহাদত বলেন, ‘মাঠের ফসল তলিয়ে গেছে। মাছ চাষ করেছিলাম, তাও ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি আগেই বেচে দিয়েছি। আয়ের কোনো পথ খোলা নাই। ঘর-দুয়ার ঠিক করব কী দিয়ে, ভেবে পাই না। বন্যার পানি কমলেও রোগবালাই দেখা দেয়ায় বিপদে আছি। ওষুধপত্র নিতে পারছি না টাকার অভাবে।’

ঝিলংজার চান্দেরপাড়ার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে কাজকর্ম বন্ধ। চারদিকে বিপদ, আয়রোজগার নাই, শুধু খরচ। ঋণ করে সংসারের খরচ চালাচ্ছি। এভাবে কত দিন চলব। বন্যায় চারদিক তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি নিয়ে পানির ওপর ভেসে আছি।’

সদরের মুহুরীপাড়ার বাসিন্দা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। ঘরে-বাইরে সবখানেই শুধু পানি আর পানি। আরও কতদিন এভাবে কষ্ট করে থাকতে হবে কে জানে। বিগত কয়েক বছরে এখানে বন্যায় এত পানি হয়নি।’

কক্সবাজারে বন্যাকবলিত এলাকায় বাড়ছে দুর্ভোগ। ছবি: নিউজবাংলা

একই রকম হতাশা প্রকাশ করেন ঝিলংজার মুক্তারকুল এলাকার আব্দুল করিম। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়িঘর ছেড়ে যাইনি। মাচা করে ছিলাম। একপর্যায় মাচা কোনও কাজে আসেনি। ঘরের চাল বরাবর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উপজেলা সদরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে এতদিন ছিলাম।

‘শুক্রবার ভোররাত থেকে পানি কমতে শুরু করায় সকালে বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু ঘরে থাকার তো কোনও উপায় নাই। বেশির ভাগ বাড়িতে বিদ্যুৎ নাই। রোগব্যাধি তো আছেই।’

রোগব্যাধি দেখা দেয়ার বিষয়টি নজরে আছে বলে জানান কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।

তার দাবি, ‘বিভিন্ন উপজেলা থেকে সামান্য রিপোর্ট পাচ্ছি। তবে রোগবালাই এখনও প্রকট আকার ধারণ করেনি। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল জানান, বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতেরও।

তিনি জানান, এরই মধ্যে জেলার বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায় ৩০০ টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা ও পাহাড়ধসে নিহতদের পরিবারকে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, দক্ষিণ বন বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে ৩ হাজার ৫২৫টি পরিবার অতি ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।

তার মধ্যে কক্সবাজার শহরে রয়েছে ৯৪৫টি পরিবার। তাদের দিনে উচ্ছেদ করলে রাতে ফের দখল করে।

সূত্র জানায়, গেল ১০ বছরে কক্সবাজারে পাহাড়ধসের ঘটনায় অন্তত ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক।

এদিকে কক্সবাজারের জেলেরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপকূলে বসে আছে শত শত মাছ ধরার ট্রলার। উত্তাল সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছে না কেউ।

নুনিয়ারছড়ার এলাকার জেলে সৈয়দ মাঝি বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন, তারপর শঙ্কা নিয়েই সাগরে গেছিলাম। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

কক্সবাজারে বন্যাকবলিত এলাকায় বাড়ছে দুর্ভোগ। ছবি: নিউজবাংলা

কুতুবদিয়া পাড়ার জাফর আলম বলেন, ‘বন্ধের সময় চরম কষ্টে দিনাতিপাত করেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষে ভেবেছিলাম কয়েক দিন সাগরে মাছ ধরে দেনা-পাওনা পরিশোধ করব। তা আর হলো কই, সাগরে যেতে পারছি না। বন্ধের সময়ে সরকার থেকে যা সাহায্য পেয়েছি, তা দিয়ে আর কতদিন চলে।’

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত অব্যাহত আছে। বৈরী পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকবে।

এ সময়ে সাগরে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেন আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান।

এ বিভাগের আরো খবর