বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘তারা এখন মূল স্রোতের মানুষ’

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১৯:১৬

মনজিলা খাতুন নামের এক নারী বলেন, ‘এখন ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে জন্মসনদ করতে পারতেছি। জাতীয় পরিচয়পত্র পাইছি। ভোটও দিচ্ছি। আগে তো কোনো পরিচয়ই ছিল না।’

৬০ বছর বয়সী গোলজার হোসেনের ছয় বছর আগে ছিল না কোনো নিজের দেশ। ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় তিনি না ছিলেন ভারতের, না বাংলাদেশের।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাতে বাংলাদেশ ভারতের মাঝে ছিটমহল বিনিময় হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ১৬৮ দশমিক ৪৮ একর আয়তনের চারটি ছিটমহলের ১ হাজার ১৮৩ জন বাসিন্দা।

সে সময় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়াদের মাঝে গোলজারও একজন। দিনমজুর গোলজার জানান, বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার আগে কোনো আইনি সহায়তা পেতেন না। তাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। চলতে হতো পরিচয় গোপন করে।

ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকে প্রতি বছর ৩১ জুলাই রাতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ছিটমহলের বাসিন্দারা দিনটি পালন করেন। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের কারণে হচ্ছে না কোনো আনন্দ উৎসব।

এই এলাকার শাহজাহান আলী জানান, বাংলাদেশ হওয়ার আগে এই এলাকার জমিজমা বিক্রি হতো শুধু কাগজে একটা সই করে। যে জমি তখন ৫ হাজার টাকা শতকে বিক্রি করেছেন সেই জমি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। জমির রেজিস্ট্রিও হচ্ছে।

এই এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে কুমলাই নদী। ছিটমহল বিনিময়ের পর এই নদীর উপর হয়েছে ব্রিজ। কমেছে মানুষের দুর্ভোগ।

ছয় বছরে বদলে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। কাঁচা রাস্তা হয়েছে পাকা সড়ক, মানুষের বাড়িতে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ, বসেছে নলকূপ, তৈরি হয়েছে শিক্ষাকেন্দ্র ও কমিউনিটি সেন্টার।

মনজিলা খাতুন নামের এক নারী বলেন, ‘এখন ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে জন্মসনদ করতে পারতেছি। জাতীয় পরিচয়পত্র পাইছি। ভোটও দিচ্ছি। আগে তো কোনো পরিচয়ই ছিল না।’

তিনি জানান, আগে পরিচয় গোপন করে বড় মেয়ের বিয়ে দিতে হয়েছে। এখন বৈধ নাগরিক হওয়ায় আর কোনো লজ্জা বা ভয় নেই।

তবে নানা বিষয়ে আক্ষেপও আছে অনেকের।

জটুয়া খাতা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানান, এই এলাকার মানুষ অত্যন্ত গরিব। সংসারের খরচ মিটিয়ে অনেক পরিবারই মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারছে না। সরকার তাদের জন্য কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নিলে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন।

জয়নাল আবেদীন জানান, তিনি সরকারকে ১৬ শতাংশ জমি দিয়েছিলেন যাতে ভালো কিছু হয়। কিন্তু হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। এখানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক খুব প্রয়োজন।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়শ্রী রানী রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রয়োজন বিবেচনায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে।

‘এলজিইডি থেকে বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ, সড়ক সম্প্রসারণ ও মেরামত করা হবে। করোনার কারণে কাজটি শুরু হয়নি। তবে দ্রুতই শুরু হবে।’

নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার জানান, চারটি ছিটমহল খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে যুক্ত হয়েছে। এখন আর ছিটমহল বলে কিছু নেই। তারা মূল স্রোতের মানুষ।

এ বিভাগের আরো খবর