কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারিতে এক ব্যাংক কর্মকর্তা একই সপ্তাহে দুই বার বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দুই নববধূর পক্ষে লোকজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
বিষয়টি নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শালিস বসানোর আগেই উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে এক নববধূসহ বরকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যায়।
শুক্রবার উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের উত্তর ভরতের ছড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, ভরতের ছড়া গ্রামের বাসিন্দা জনতা ব্যাংক ভূরুঙ্গামারী শাখার ক্যাশ কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের আশানুল আঁখিকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
শুক্রবার বিকেলে আঁখিকে নিয়ে ছানোয়ার শশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের খামার আন্ধারীঝাড় গ্রামের আইরিন আইমিন নিজেকে ছানোয়ারের স্ত্রী দাবী করে তার বাড়িতে আসেন।
এসময় ছানোয়ারের পরিবার এবং আঁখির আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আইরিনের বাবা ও আত্মীয় স্বজনদের বাগবিতণ্ডা বেঁধে যায়।
তারা জানান, আখিঁর পক্ষের স্বজনরা ছানোয়ারকে মাইক্রোবাসে তুলতে গেলে আইরিনের পক্ষ থেকে তাকে টেনে নামানো হয়। এতে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী উভয় পক্ষকে শান্ত করে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সুরাহার উদ্যোগ নেন।
এসময় আঁখির পক্ষে ভূরুঙ্গামারী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ১০-১২ জন নেতাকর্মী একটি মাইক্রোবাস যোগে এসে ছানোয়ার এবং আঁখিকে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
আন্ধারীঝারের আইরিনের দাবি, ছানোয়ারের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২৩ জুলাই নাগেশ্বরীতে তার মামার বাড়িতে ছানোয়ারের পরিবারের সম্মতিতে রেজিস্ট্রি করে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ছানোয়ারসহ ওই মামার বাড়িতে দুই দিন কাটান তারা। শুক্রবার পারিবারিকভাবে তাকে ছানোয়ার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসার কথা বলে সেখান থেকে চলে আসে। ওই মোতাবেক বাড়িতে আয়োজনও চলছিল। আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াতও করা হয়েছে।
তিনি জানান, বরযাত্রী আসার দেরি দেখে ছানোয়ারকে ফোন দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
আইরিন বলেন, ‘লোক মারফত ভূরুঙ্গামরীতে তার বিয়ের কথা জানতে পারি এবং এসে দেখি নতুন বউ নিয়ে সে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। আমি ছানোয়ারের বিয়ে করা প্রথম স্ত্রীর দাবী করে এখন তার বাড়িতে অবস্থান করছি।’
ভূরুঙ্গামারীর নববধূ আঁখি বলেন, ‘ছানোয়ারের সঙ্গে আমার চলতি বছরের মার্চ মাসে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তবে সেটি নানা কারণে প্রকাশ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আমি শ্বশুর বাড়িতে আসি। আমিই ছানোয়ারের প্রথম স্ত্রী। আইরিনের পক্ষ ছানোয়ারকে বাড়িতে চায়ের দাওয়াত দিয়ে জোর করে বিয়ের রেজিস্টার করিয়েছেন।’
এই বিষয়ে ছানোয়ার হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সামনাসামনি বসে কথা হবে।’
এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভূরুঙ্গামারীর সাবেক উপজেলা চেয়াম্যান আব্দুল হাই মাস্টার বলেন, ‘একজন ব্যক্তি এক সপ্তাহের মধ্যে দুই বিয়ে করার ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বসার কথা ছিল। তবে ছাত্রলীগের ছেলেরা এক পক্ষ নিয়ে এসে ছানোয়ারসহ আঁখিকে নিয়ে চলে যাওয়ায় আর বসা হয়নি।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার বলেন, ‘আমরা কয়েক জন গিয়ে ছানোয়ার ও আঁখিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমার জানা মতে, ছানোয়ারের সঙ্গে আঁখির বিয়ে এ বছরের শুরুতেই রেজিস্ট্রি হয়েছে।’
ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘স্ত্রী দাবী করা দুই জনই ব্যাংক কর্মকর্তা ছানোয়ারের বৈধ স্ত্রী। একজনকে চলতি বছরের মার্চে এবং অপরজনকে জুলাই মাসে বিয়ে করেছেন। এটা তাদের পারিবারিক বিষয়। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই এখনও থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।’