কক্সবাজারের টেকনাফে অসহায় ভূমিহীনদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের অর্ধশত ঘর প্লাবিত হয়েছে।
টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের স্লুইচ গেট বন্ধ থাকায় ও বিলের মাঝখানে নিচু জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন সেখানে বসবাসরত অর্ধশত পরিবার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, টেকনাফে মুজিববর্ষে উপহারের ঘরের বরাদ্দ আসে ২২৯টি। প্রথম পর্যায়ে ৫০টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হ্নীলা ইউনিয়নে মৌলভীবাজারের পূর্ব দিকে সীমান্ত সড়কের কাছাকাছি নির্মিত ২৫টি ঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সেখান থেকে এখন নৌকা ছাড়া বের হওয়ার উপায় নেই। কয়েকটি পরিবার ছাড়া সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে। একইভাবে ডুবেছে ওয়াব্রাং ইউনিয়নের ২৫টি উপহারের ঘর।
হ্নীলাতে উপহারের ঘরে পানিবন্দি সমিরা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। নৌকায় করে খাবার এনে খেতে হচ্ছে। কেউ সহায়তা দিতে আসেনি। ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কষ্টে আছি।’
রমিজা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ‘এখানে ২৮টি পরিবারের মধ্যে চারটি পরিবার ছাড়া বাকিরা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, মূলত এই এলাকায় কিছু লোকজন বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট বন্ধ রাখার কারণে আমরা সবাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। এ ছাড়া সরকার আমাদের যেখানে ঘর দিয়েছে, সেটি অনেক নিচু এলাকা।
পরিবারের অন্যান্যরা চলে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রে তাই ঘর পাহারা দিচ্ছিলেন সৈয়দ আলম। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ঘরে চুলা জ্বলে না। ঠিকমত খেতে পারিনি। এখানে সুপেয় পানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
‘ঘরটি আমার একমাত্র সম্বল, তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও এখানে অবস্থান করছি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, হ্নীলা ইউনিয়নের আবুল কালাম, মো. সাবের, সৈয়দুল আমিন ও হোসেন বলিসহ লবণ চাষিদের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত সড়কের বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট বন্ধ রেখেছেন। এতে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে এলাকাটি পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিন হোসেন জানান, কয়েকজন অসাধু লবণ চাষির জন্য তাদের পুরো এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাঁচ শতাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন। খাবার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, টেকনাফে রেকর্ড বৃষ্টিতে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘরও রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, সীমান্ত সড়কে বেড়িবাঁধের স্লুইস গেটের যে সমস্যা সেটি সমাধানের কাজ চলছে। কারা গেট বন্ধ রাখছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। পানিবন্দি জনগোষ্ঠীর খবরও নেয়া হচ্ছে।
টেকনাফে এবার ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি ২০ বছর আগের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।