বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভরা বর্ষায় খরার মুখে কুড়িগ্রাম

  •    
  • ৩০ জুলাই, ২০২১ ২০:৩৭

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বয়ে যাওয়া অধিকাংশ নদী এখন প্রায় পানিশূন্য। বৃষ্টির অপেক্ষায় চলে যাচ্ছে আমন রোপণের মৌসুম। বেড়ে যাচ্ছে চারার বয়স। উদ্বিগ্ন কৃষকদের অনেকে তাই সেচযন্ত্র চালু করে আমন রোপণ শুরু করেছেন।

বন্যা কারও জন্য আশীর্বাদ, কারো জন্য সর্বনাশ। যে শ্রাবণ মাসে নদ-নদী, পুকুর-খাল-বিলে পানি কানায় কানায় পূর্ণ থাকে, সেখানে উল্টো চিত্র কুড়িগ্রামে। ভারী বৃষ্টিপাত নেই। ফলে তাপপ্রবাহ চলছে জেলায়।

১৬টি নদ-নদীর কুড়িগ্রাম জেলায় রয়েছে ৩১৬ কিলোমিটার নদীপথ। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী এবং রাজিবপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদই রয়েছে ৩৭ কিলোমিটার।

তিস্তা নদী রাজারহাট, উলিপুর এবং চিলমারীতে ৩৫ কিলোমিটার। ধরলা নদী ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম সদর এবং উলিপুরে ৩৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে।

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বয়ে যাওয়া অধিকাংশ নদী এখন প্রায় পানিশূন্য। ভারতের উজান থেকে নদ-নদী দিয়ে প্রায় ২ বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তার মধ্যে ৮০ শতাংশ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদী দিয়ে আসে। ফলে নদীগুলো দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন- এই চার মাস নদীগুলোতে কানায় কানায় পানি থাকে। বছরের বাকি আট মাসের মধ্যে কার্তিক, অগ্রহায়ণ- দুই মাস পানি মাঝামাঝি এসে দাঁড়ায়। পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে পানি একেবারে কমে আসে।

উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে পানিপ্রবাহ কমে আসায় নদীগুলোতে পানিসংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

সেচের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে আমনের চারা

কুড়িগ্রামে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে চলে যাচ্ছে আমন রোপণের মৌসুম। বেড়ে যাচ্ছে চারার বয়স। উদ্বিগ্ন কৃষকদের অনেকেই তাই সেচযন্ত্র চালু করে আমন রোপণ শুরু করেছেন। চড়া রোদের কবল থেকে চারা বাঁচাতে অনেকে দফায় দফায় সেচ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচও। নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মাছ না পেয়ে জেলেরা অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি এলাকার কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, সেচ দিয়ে চারা লাগানোর পরও তীব্র খরায় জমি ফেটে যাচ্ছে। বারবারেই সেচ দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে। অথচ এই সময় তারা বৃষ্টির পানিতেই আবাদ করেন।

কিন্তু এ বছর আবাদ শুরুতেই বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। সামনে বৃষ্টি না হলে আগাম খরা দেখা দিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

পাঁচগাছি ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার কৃষক স্বপন আহমেদ বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে রোপণ বিলম্বিত হওয়ায় চারার বয়স বেড়ে রোপণ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ছত্রাক ধরে নষ্ট হচ্ছে বীজতলা।

এ অবস্থায় আমন রোপণ নিয়ে সংকটে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। বাড়তি খরচে সেচ দেয়ার সংগতি নেই যাদের, সেসব ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি রয়েছেন বিপাকে।

ধরলা নদী জেলে মকবুল হোসেন বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তেমন বৃষ্টি নেই। প্রচণ্ড গরম। নদীতেও পানি নেই। গত বছর এই সময় বন্যা থাকায় তার মাছ ধরে সংসার চলেছে। কিন্তু এ বছর বৃষ্টিও নেই, নদীতে পানিও নেই।

মকবুল হোসেন আরও বলেন, ‘নদীর পাড়ত আসলে চোখে পানি আসে। সারা দিন রোদে বসি থাকি হাফ কেজি মাছও পাও না। লকডাউন চলতেছে, তেমন কাজও নাই। এখন সংসার চালানো কঠিন।’

পৌরসভার সিঅ্যান্ডবি এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, এবার শ্রাবণ মাসেও তাপমাত্রা কমছে না। তাপমাত্রা বেশি থাকায় গরমে জ্বর, চুলকানি, ঘা-পাঁচড়া, ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে এলাকায়। এই ভ্যাপসা গরমে শিশু আর বয়স্কদের খুব কষ্ট হচ্ছে। রোদে জমির পটোল, করলা, বেগুনক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘কুড়িগ্রামে অর্ধশতাধিক নদ-নদী রয়েছে, সেগুলোর পরিচর্যা করা হয় না। ফলে অনেক নদী ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভরাট হয়ে পড়ছে।

‘এতে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে অল্পতেই বন্যা এবং নদীভাঙন দেখা দেয়। এতে করে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফসলের ক্ষতি হয়, জমির ক্ষতি হয়। যে বছর বৃষ্টি কম হয়, সে বছর পানির স্তর কমে যায়।

‘গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তোলার কারণে মাটির উপরিভাগের গঠন নষ্ট হয়ে যায়। কুড়িগ্রামের নদীগুলোকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংস্কার এবং খনন করে সারা বছর পানিপ্রবাহ ধরে রাখা যায়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, মধ্য আগস্ট পর্যন্ত চারা রোপণের সময় থাকলেও চারার বয়স বেড়ে গেলে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কৃষকদের সম্পূরক সেচ দিয়ে চারা রোপণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জেলায় এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গভীর নলকূপসহ প্রায় সব সেচপাম্প চালু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে চারা রোপণের কাজ শেষ করেছেন কৃষকরা। এর ৮০ ভাগই সেচের সাহায্যে রোপণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটির প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হলেও রংপুর অঞ্চলে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে লঘুচাপটি স্থল নিম্নচাপ আকারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাব কেটে যাওয়ার কারণে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। তবে বর্তমানে এই অঞ্চলে এই মুহূর্তে অতিভারী বৃষ্টিপাত বা বন্যার পূর্বাভাস নেই।

এ বিভাগের আরো খবর