‘আপা ভাত কম দে, সময় নাই। বরিশাল যাইতে অইবে। প্যাসেঞ্জার দাঁড়াইয়া আছে। রাইতে আইয়া ভালোভাবে খামুআনে।’
কিন্তু রাতে আর খাওয়া হয়নি পটুয়াখালীর মোটরসাইকেলচালক ইব্রাহীম ফয়সালের। ফেরার পথে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার রাতে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের পটুয়াখালী পরিত্যক্ত বিমানবন্দর এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় পালানোর চেষ্টা করা সুজন হাওলাদার নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন স্থানীয়রা।
নিহত ফয়সালের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানায়। তিনি মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতেন।
ফয়সালের বোনজামাতা নুরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে মহিপুরে তাদের বাসায় ফয়সাল দুপুরের খাবার খান। ওই সময় যাত্রী অপেক্ষা করছে জানিয়ে কোনো রকমে খাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়েন তিনি।
মহিপুর থেকে ইমন নামে একজন ও তার স্ত্রীকে নিয়ে বরিশাল যান ফয়সাল। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মোটরসাইকেলে যান্ত্রিক ত্রুটি হয় বলে মোবাইল ফোনে ফয়সাল তার বোন আসমা আক্তার ময়নাকে জানান।
তিনি আরও জানান, শেষ বিকেলে ইমন দম্পতিকে বরিশাল নামিয়ে দিয়ে আটক সুজন ও তার সঙ্গে থাকা আরেক যুবককে নিয়ে বরিশাল থেকে পটুয়াখালীতে রওনা হন ফয়সাল।
ফয়সাল তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সঙ্গে না নেয়ায় পরে যাত্রী ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বোন আসমা। তখন ইমন জানান, দুই যুবককে নিয়ে ফয়সাল পটুয়াখালী রওনা হয়েছেন।
এক অ্যাম্বুলেন্সচালক মধ্যরাতে তাদের ফোন করে বলেন, ‘ফয়সাল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আপনারা পটুয়াখালী হাসপাতালে চলে আসেন।’ পরে তারা হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন ফয়সাল খুন হয়েছেন।
কারও সঙ্গে শত্রুতার বিষয়ে নুরুল বলেন, ফয়সালের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ নেই। শুধু ওর বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা আছে।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জমান জানান, ওই থানায় হওয়া মাদকের মামলা ফয়সাল তিন মাস জেল খেটেছেন। এ ছাড়া তিনি এলাকায় ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করতেন।
সদর থানার ওসি আখতার মোর্শেদ জানান, আটক সুজন ফয়সালের মোটরসাইকেলের যাত্রী ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় তাকে আটক করেন স্থানীয়রা।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুজন উল্টাপাল্টা কথা বলছেন জানিয়ে ওসি বলেন, সুজনের দেয়া তথ্যে নানা অসংগতি রয়েছে। হত্যার কারণ ও জড়িতদের বের করতে পুলিশ চেষ্টা করছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।