কক্সবাজারে টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৪১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসে ও বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গত দুই দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে কমপক্ষে ৩ জন।
বন্যায় বুধবার পর্যন্ত ৫৫ হাজার ১৫০ পরিবারের আড়াই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন প্রতিনিয়ত বন্যার্তদের সার্বিক সহযোগিতায় মাঠে কাজ করছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় তথ্যমতে, টানা ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ধস ও ঢলের পানিতে ভেসে বুধবার ১২ জন, মঙ্গলবার ৫ রোহিঙ্গাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। টেকনাফে পাহাড়ধসে একই পরিবারের ৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ঈদগাঁও খালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যায় বুধবার পর্যন্ত ৫৫ হাজার ১৫০ পরিবারের আড়াই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
এ নিয়ে ২৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কক্সবাজারে দুই দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে কক্সবাজারে টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। একই সঙ্গে ৩ নম্বর সতর্কসংকেতও বহাল রয়েছে।
কক্সবাজার জেলার ৭১ ইউনিয়ন ও ৪ পৌরসভার মধ্যে ৪১ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। যেখানে গ্রামের সংখ্যা ৪১৩টি। এসব গ্রামে ৫৫ হাজার ১৫০ পরিবারের আড়াই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব প্লাবিত এলাকায় ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৫৮ গ্রাম, রামু উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৩৫ গ্রাম, চকরিয়া উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের ১০০ গ্রাম, পেকুয়া উপজেলার ২ ইউনিয়নের ৬ গ্রাম, মহেশখালী উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৩৮ গ্রাম, উখিয়া উপজেলার ২ ইউনিয়নের ১২০ গ্রাম, টেকনাফ উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ৫৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঈদগাঁও খালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রশাসনের এই তথ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার প্লাবিত এলাকার সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কুতুবদিয়া উপজেলায় অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আমিন আল পারভেজ জানান, প্লাবিত এলাকায় সহায়তা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩৫ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনের আরও জরুরি বরাদ্দ দেয়া হবে।
বুধবার সকালে রামু সদরের বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
বৃহস্পতিবারও রামুর বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের স্থান ও পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন এমপি। দুপুরে তিনি ঈদগাঁও খালে নিখোঁজ হওয়া তিনজনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান এবং ওই এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখেন।
এদিকে কক্সবাজার পৌর মেয়র মো. মুজিবুর রহমান সদরের বাংলাবাজার এলাকায় রান্না করা খাবার নিয়ে ছুটে যান।