বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলে বাঁধ ধসের আতঙ্ক  

  •    
  • ২৯ জুলাই, ২০২১ ১৮:২৭

টানা বর্ষণে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লোকালয়ের পাশাপাশি আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া নদীতীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢোকায় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘের থেকে বের হয়ে গেছে চাষের মাছ।

সাগরে মৌসুমি লঘুচাপের কারণে বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। দমকা হাওয়ার সঙ্গে এই বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি এই টানা বৃষ্টির কারণে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বরিশালে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল।

তিনি বলেন, সাগরে মৌসুমি লঘুচাপের কারণে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি টানা বৃষ্টি হচ্ছে। যা আরও কিছুদিন থাকবে।

এদিকে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাবেদ হোসেন বলেন, বুধবার ভোলায় ৫০ মিলিমিটার, ঝালকাঠিতে ৫৮, পাথরঘাটায় ২৯৮, পটুয়াখালীতে ১৭২, পিরোজপুরে ১৫০ এবং বরগুনায় ৩৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভোলায় ৪০ মিলিমিটার, ঝালকাঠিতে ৭৯, পাথরঘাটায় ৮৭, পটুয়াখালীতে ৭০, পিরোজপুরে ৭০ ও বরগুনায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

টানা বৃষ্টির ফলে বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসলের মাঠ ও মাছের ঘেরের।

সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণে বরগুনার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবনে লোকালয়ের পাশাপাশি আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া নদীতীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢোকায় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘের থেকে চাষের মাছ বের হয়ে গেছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মাহতাব হোসেন জানান, অতিবর্ষণে বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর- এই তিনটি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। অতিবর্ষণের সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় সৃষ্ট ঢেউয়ে জেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপকূলীয় নদীতীরবর্তী এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ২২টি পোল্ডারের ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙনকবলিত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আমরা সেসব এলাকার বাঁধ রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার ছয় উপজেলার মধ্যে আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা ও বরগুনা সদরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে পানিতে তলিয়ে গেছে।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন বিষখালী নদীর তীরের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘দেওইর (বৃষ্টি) পানিতে মোগো বাড়িঘর সব ডুইব্বা যাইতেছে। বাসার মইদ্দে পানি হানছে, এহন ঘরে বন্দি হইয়া পড়ছি মোরা।’

গত তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণে ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়েছে। এতে আমনের বীজতলা নিমজ্জিত রয়েছে। এ ছাড়া আমনের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এবার জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এসব জমিতে আমন আবাদের জন্য ১৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়। কিন্তু প্রবল বর্ষণের কারণে অধিকাংশ এলাকার বীজতলা এখন ডুবে আছে।

অতিবর্ষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে উপকূলীয় বরগুনা জেলার মাছচাষিদের। বিশেষ করে নদীতীরবর্তী এলাকার ঘেরগুলোর অধিকাংশই বর্ষণের পানিতে থইথই করছে। এসব ঘেরের মাছ নেট জাল দিয়ে কোনোমতে আটকে রেখেছেন চাষিরা। তবে অনেকের মাছ লাফিয়ে বানের জলে ভেসে গেছে।

বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যাওয়া শত শত জেলে ট্রলার বরগুনা, পাথরঘাটা, তালতলীসহ বিভিন্ন এলাকার খালে নিরাপদ তীরে নোঙর করেছে।

অপরদিকে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে ঝালকাঠির নিম্নাঞ্চল। এরইমধ্যে বেড়েছে এই জেলার সুগন্ধা, বিষখালী এবং হলতা নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হাসান নিউজবাংলাকে জানান, এই জেলার সব নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক শূন্য ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এসব নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তলিয়ে গেছে কৃষকের ফসলি জমি। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের।

অপরদিকে পিরোজপুরে সকাল থেকেই ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা দ্বীপ জেলা ভোলার ১২টি ইউনিয়নের ২৫টি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মেঘনার পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরের নিচু এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কমপক্ষে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।

পানি বৃদ্ধির কারণে ভোলা সদর উপজেলার উপকূলবর্তী নাছির মাঝি, রাজাপুর, চর চটকিমারা, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, নেয়ামতপুর, হাজিপুর, মনপুরার চরনিজাম, কলাতলীর চর, চর যতিন, চরফ্যাশনের কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর পাতিলা, মাঝের চর, চর শাহজালাল, কচুয়াখালীর চরসহ ২৫ চর প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলেও এখনও তেমন ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নেই। নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘নদীতীরবর্তী যেসব ইউনিয়ন রয়েছে, সেসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। আমরা খোঁজ রাখছি। কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রতিবেদন তৈরিতে সহাযোগিতা করেছেন বরগুনার রুদ্র রুহান, ভোলার আদিল তপু ও ঝালকাঠির হাসনাইন তালুকদার দিবস।

এ বিভাগের আরো খবর