টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে ভূমিধসের আশঙ্কায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত দুই হাজার পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বুধবার রাত ১০টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৬ জুলাই থেকে আমরা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে দুই হাজার পরিবারের প্রায় ৯ হাজার মানুষকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও তাদেরকে নিজেদের ঘরে ফিরিয়ে আনা হবে।’
গত সোমবার থেকে কক্সবাজারে ভূমিধস ও বন্যায় ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে প্রশাসন। যাদের ছয়জন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের। তাদের পাঁচজন পাহাড় ধসে ও একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
উখিয়ার ১০ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা ৩০ বছরের আবদুস সালাম পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার তিন সন্তান। স্ত্রীসহ আমরা পাঁচজন মিলে একটি ছোট ঝুপড়ি ঘরে বাস করতাম। পাহাড়ধসে আমার ঘর ভেঙে গেছে। সব জিনিসপত্র মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। এখানে সুযোগ-সুবিধা নেই। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা বিপদে পড়ে গেছি।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘টানা ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টানা বর্ষণে জেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫১ হাজার ১৫০টি পরিবার।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানান, বুধবারও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার সদরে ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।’
গত মাসে ভারী বৃষ্টির সময় আলাদা দুটি ভূমিধসে দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হয়েছিলেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করছে।