ঝুঁকি জেনেও দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইউরোপ যাচ্ছেন তরুণরা। বিপৎসংকুল সে যাত্রায় প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি।
সর্বশেষ ১৯ জুলাই তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে ১৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জনের বাড়ি মাদারীপুরে।
এই পাঁচজন হলেন রাজৈর উপজেলার জিন্নাত শেখ, সাধন মল্লিক, হৃদয় কাজী, সাগর শিকদার ও মাদারীপুর সদর উপজেলার মো. সাকিল।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিহতদের স্বজনরা জানান, প্রায় তিন মাস আগে ওই পাঁচজন দালালদের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছান। সেখানে আড়াই মাস একটি জেলে আটক থাকার পর তারা ইতালির জন্য রওনা দেন। মাঝপথে ডুবে মৃত্যু হয়।
ওই পাঁচজনের একজন হৃদয় কাজী। এসএসসি পাস করে হৃদয় পড়ালেখা ছেড়ে বাবার মুদি দোকানে কাজ করতেন। দোকান থেকে রোজগার কমে যাওয়ায় স্বজনরা তাকে পাঠাতে চেয়েছিলেন ইতালি।
হৃদয়ের বাড়ি রাজৈর পৌরসভার ঘোসালকান্দি এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় তার মা কোমেলা বেগম মেঝেতে বসে কাঁদছেন। সন্তানের সঙ্গে বলা শেষ কথাগুলো বলে আহাজারি করছেন।
হৃদয়ের বাবা মোশাররফ কাজী বলেন, ‘আমার পোলাডার এমন পরিণতি হবে জানলে কিছুতেই বিদেশ পাঠাইতাম না। দালালগো এত এত টাকা দিয়াও আমার পোলাডারে বাঁচাইতে পারলাম না।’
সাগরে ডুবে একই পরিণতি হয়েছে মাদারীপুর সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের শাকিলের। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বিলাপ করছেন মা রাজিয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার সব তো শেষ হয়ে গেল। একমাত্র ছেলেডা আমারে রাইখা চইলা গেল। আমি আর বাঁইচা থাকব কার আশায়? তোমরা আমার ছেলেডারে শেষবারের মতো দেখাইয়া নাও।’
ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এই তরুণদের প্রতিজনের কাছ থেকে সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে তাদের বাহরাইন হয়ে দুবাই নেয়া হয়। দুবাইতে এক সপ্তাহ থাকার পর নেয়া হয় লিবিয়া। লিবিয়া পৌঁছানোর পর ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দুই ধাপে প্রায় ৩ লাখ টাকা নেয়া হয়।
লিবিয়ায় একটি বন্দিশিবিরে তাদের আটকে রাখা হয়। এরপর আবার ইসলামী ব্যাংকের আরও একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেয়া হয়। সেখান থেকে চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়া থেকে সাগরপথে তাদের পাঠানো হয় ইতালিতে।
মাদারীপুরের পাঁচটি থানায় গত দেড় বছরে মানব পাচার আইনে ৩৮টি মামলা হলেও এর পেছনে জড়িতরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ কেউ আছেন জামিনে। মাদারীপুর জেলা পুলিশ জানায়, ৩৮টি মামলায় ১৯৬ জনকে আসামি করা হলেও পুলিশ ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করে। ২০টি মামলার তদন্ত শেষ করে পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। এরমধ্যে আদালতে ১০ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।
বাকিগুলোর মধ্যে আটটির তদন্ত চলছে, ১০টির তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) চাইলাউ মারমা জানান, দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাদের কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হয় না। অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের ধরা হয়। এরপরও প্রায়ই দেখা যায় ভুক্তভোগীরা মামলা দিতে আসতে চান না।