২৪ ঘণ্টায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিতে আবার ডুবেছে চট্টগ্রাম।
সকাল থেকে শুরু হওয়া মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিতে বুধবার বিকেল থেকে নগরীর নিচু এলাকায় পানি জমতে শুরু করে।
সিডিএ, আগ্রাবাদ, জিইসি, দুই নম্বর গেট, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, চকবাজার, ফিরিঙ্গিবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সাধারণত ৮০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই ভারী বর্ষণ বলা হয়।
আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও ভারী বর্ষণ থাকতে পারে। এতে পাহাড় ধসের শঙ্কা আছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু পানি নগরে ঢুকে গেছে। সব মিলিয়ে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি হয়েছে।’
নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার ইমন দে বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়ের জন্য ওষুধ কিনতে বের হয়ে দেখি সড়ক মোটামুটি সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে এক নাগাড়ে। সব মিলিয়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।’
চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্প নিয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রকল্পের কাজ করছে সিডিএ।
এই প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মাঈনুদ্দিন সম্প্রতি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এই বছর সুফল না মিললেও ২০২২ সালে সুফল মিলবে। কাজের জন্য খালে বাঁধ দেয়ায় নগরের কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
এদিকে কর্ণফুলী নদীর তীর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়ক ও স্লুইসগেট নির্মাণের আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৮ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘আমার প্রকল্পের আওতায় ৮টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। সব গেটের কাজ শুরু হয়েছে। তিনটি গেটের নির্মাণকাজ শেষ। চাক্তাই খালের মুখের গেটের কাজ শেষ হওয়ায় এবার খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা হচ্ছে না। বাকিগুলোর কাজ শেষ হলে সুফল মিলবে।’
চট্টগ্রাম মহানগরে নতুন করে একটি খাল খনন (বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৬৫ ফুট প্রস্থ) প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থাভাবে এখনও ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। প্রকল্পের কাজও পুরোপুরি শুরু করা যায়নি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘টাকার অভাবে আমরা ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারছি না। সরকার টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে না।’
বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পেরও এখনও কাজ শুরু হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী ত্রয়ন ত্রিপুরা বলেছেন, প্রকল্পের অবকাঠামো কাজে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বর্ষার পর প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।