লকডাউন আর তীব্র দাবদাহে নাকাল কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ।
সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
বৃষ্টিপাতহীন শ্রাবণ মাসের প্রখর রোদের ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে অলসতায় কাটছে শ্রমজীবীদের দিন। দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক, ঠেলা ও ভ্যানচালকরা প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়ছেন।
মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে লকডাউনে আয়রোজগার কমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ। কোনো কাজ জুটলে তীব্র গরমে সেই কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এতে করে করোনা এবং তাপমাত্রার প্রভাব পড়েছে সংসারে। তীব্র গরমে বয়স্ক, শিশুদের ভোগান্তি বেড়েছে।
একটু স্বস্তি পেতে ঠাণ্ডা শরবত, পানি, আইসক্রিম খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা অনেকের। চলতি মাসে কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ছিল গড়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরে শিশু, বয়স্করা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাপের কারণে নানা বয়সীদের দেখা দিয়েছে চর্মরোগও। অনেকেরই জ্বর-সর্দি-কাশি হচ্ছে। ফলে আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে করোনার উপসর্গের মিল থাকায় আতঙ্কিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তীব্র তাপের কারণে মাঠে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কৃষিশ্রমিকরা।
অসহ্য গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লো-ভোল্টেজ আর লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। তীব্র গরমে ঘরে থাকতে না পেরে মানুষ বিভিন্ন গাছতলায় দিন পার করছেন।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা কাদের মিয়া বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরে রাত-দিনে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় শিশু, বয়স্কদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’
রিকশা চালক টুংকু বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে রিকশা চালাই। লকডাউনের কারণে ভাড়া পাই কম। এর মধ্যে দুই-একটা ভাড়া জুটলেও রোদের তাপ শরীরে সয় না। দিনে আগে ৭০০-৮০০ টাকা আয় হলেও লকডাউন আর গরমে এখন আয় ১০০ থেকে দেড় শ টাকাও হয় না।’
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ব্যাটারিচালিত অটোচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘লকডাউনের কারণে অটো বের করতে পারি না। চুপচাপ একটু বের হলেও পুলিশ ধরলেই অটোর সিট খুলে নিয়ে যায়। একটানা অটো বসিয়ে রাখলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো অটো চার্জ করাও যায় না। বাধ্য হয়েই লকডাউন উপেক্ষা করে পেট চালাতে আর অটোর ব্যাটারি যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হতে হয়।’
শ্রমিক সামছুল মিয়া বলেন, ‘লকডাউনের কারণে রোজগার কমছে। পিঠের মধ্যে বস্তা ওঠানো যায় না। এত গরম কখনও দেখি নাই।’
ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় এলাকার বুলবুলি হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশুদের সর্দি আর ডায়রিয়া বেশি হচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র বলেন, ‘আগামী ৩০ জুলাই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে তাপমাত্রার তীব্রতা কমে আসবে। গত ১৫ জুলাই হতে কুড়িগ্রামে গড়ে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শ্রাবণ মাসের গরমে হৃদরোগ, সর্দি, কাশি এবং জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে।’
তিনি পরামর্শ দেন, তীব্র গরমের তরল খাবার এবং ছায়াযুক্ত স্থানে আশ্রয় নেয়ার। কেউ অসুস্থ হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শও নেয়ার কথাও জানান তিনি।