টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের প্রায় আড়াই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণসহ সোমবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২-এর উপসহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সোমবার আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। বুধবার সকালে আমরা অভিযোগপত্রের অনুলিপি পেয়েছি।
‘১৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে আছেন প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ২৯ জনকে।’
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রদীপ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তার স্ত্রী চুমকির নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন। এ ছাড়া দুজনের বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।
মাহমুদুল হক জানান, অভিযোগের প্রমাণ মেলায় দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
গত বছরের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।
এ ঘটনায় রাশেদের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস কক্সবাজারের বিচারিক হাকিমের আদালতে প্রদীপসহ নয়জনের নামে মামলা করেন।
মামলার পর অসুস্থতার কথা বলে থানা থেকে ছুটি নিয়ে চলে যান প্রদীপ। এরপর তিনি চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যান। সেখান থেকে ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।
সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে রোববার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে প্রদীপ, তার স্ত্রী ও কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
গত বছরের ২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেন।
এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ওসি প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ করে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়।
এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তার সম্পদের খোঁজ পাওয়া যেতে থাকে। নানা কারণে তিনি আলোচিত হতে থাকেন।
দুদক জানায়, চুমকি নগরের পাথরঘাটা এলাকায় তার বাবার কাছ থেকে একটি ছয়তলা বাড়ি পেয়েছেন বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চুমকির দুই ভাই ও আরেক বোন বাবার কাছ থেকে কোনো বাড়ি পাননি।
এ থেকে ধারণা করা হয়, প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই বাড়ি করেছেন। কিন্তু কাগজপত্র তার শ্বশুরের নামে করেন। ২০১৩ সালে শ্বশুরের কাছ থেকে এটির দানপত্র করে নেন।
ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই স্ত্রী চুমকির নামে। যদিও চুমকি গৃহিণী। তার বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎস নেই। কিন্তু চুমকির নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তার মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
চুমকির আগের সঞ্চয়, উপহার, বাড়িভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকির নামে মোট ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটি তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
ওসি প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ কিনে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।