বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লঘুচাপ: কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২১ ২২:২৮

জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে উপকূলে ফিরেছে মাছ ধরার ট্রলার।

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে গত তিন দিনের ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েও ফিরে আসছে জেলেরা। এদিকে পাহাড় ধসে ৫ রোহিঙ্গাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার এ পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আব্দুর রহমান।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে উপকূলে ফিরেছে মাছ ধরার ট্রলার।

জেলেরা জানান, হঠাৎ করে সাগর উত্তাল এবং বাতাসের বেগ বেড়ে যাওয়ায় সাগরে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

নুনিয়ারছড়া এলাকার জেলে মো. করিম বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর শঙ্কা নিয়ে সাগরে গেছিলাম। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

কুতুবদিয়া পাড়ার আকবর আলী মাঝি বলেন, ‘বন্ধের সময় চরম কষ্টে দিনাতিপাত করেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষে ভেবেছিলাম কয়েকদিন সাগরে মাছ ধরে দেনা পরিশোধ করবে। কিন্তু তা আর হল কই। বিরূপ আবহাওয়ার সাগরে মাছ শিকারে গিয়েও ফিরে আসতে হল।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধের সময়ে সরকার থেকে যা চাল পেয়েছি, তা দিয়ে কি আর সংসার চলে।’

ট্রলার মালিক নুরুল আবছার বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধে ট্রলার পানিতে থাকায় বেশ কিছু অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষ করেও সাগরে যাওয়া হল না।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ পারভেজ চৌধুরী জানান, উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, সাংবারাংয়ের বেশ কয়েকটি গ্রামের সাত শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে চেষ্টা চলছে। এছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের মাইকিং অব্যাহত রয়েছে।

প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারে অধিকাংশ নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে উখিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। সড়কে পানি ওঠায় চলাচলে দুর্ভোগ বাড়ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের বেশ কয়েকটি শরণার্থী শিবির। এসব শিবিরের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

মহেশখালী নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। আউশ ও আমন ধানের জমিতে পানি জমেছে। এতে হতাশা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। চকরিয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। চিংড়ি ঘেরে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান চাষীরা।

উখিয়ার কুতুপালং ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, গত সোমবার থেকে টানা বৃষ্টিতে কুতুপালংয়ের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে কুতুপালং বাজারের একাংশ, পূর্ব পাড়া, পশ্চিমের বিল পানিতে তলিয়ে রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসৌদ্দজা নয়ন বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে কিছু ক্যাম্প প্লাবিত হয়েছে। তবে কয়টি ক্যাম্প প্লাবিত হয়েছে তা জানতে সময় লাগবে। বিচ্ছিন্ন কিছু পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনে সদস্য সচিব এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন-রাস্তা নির্মাণ এবং বাকঁখালীর পাড় দখলসহ নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে বৃষ্টি হলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অনুদানে পৌরসভার সব ড্রেন নতুনভাবে নির্মাণ হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। শিগগিরই সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে। রাস্তা ও নালা দখলকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে ব্যবস্থা।

অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকার ফাতের ঘোনা, সৈকত পাড়ার ৫১ একর সংলগ্ন বাঘঘোনা, ঘোনার পাড়া, বৈদ্য ঘোনা,পাহাড়তলী, ইসলামাবাদ, বাদশাঘোনা, ইউছুফের ঘোনা, সাহিত্যিকা পল্লী, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, বাস টার্মিনাল, আদর্শগ্রাম, উত্তরণের আশপাশ ও জেলগেইট এলাকায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মামুনুর রশিদ জানান, পাহাড় ধসে ৫ রোহিঙ্গাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে খবর পেয়েছি। ভারী বর্ষণে কোথায় কি ক্ষতি হচ্ছে খবর নেয়া হচ্ছে। এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে।

তিনি বলেন, পাহাড় কাটা রোধে জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলছে। পাহাড় ধস নিয়ে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর