ফসলি জমি ও ঈদগাহ আছে। বেশ কয়েকটি বসতভিটার ধ্বংসাবশেষের দেখাও মেলে। রয়েছে চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা। কিন্তু মানুষ নেই।
শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও এমনই একটি গ্রাম রয়েছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে। গ্রামটির নাম মঙ্গলপুর।
গ্রামের নাম মঙ্গলপুর হলেও এক সময় যেন অমঙ্গল ভর করেছিল এ গ্রামে। এ কারণে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় গ্রামের বাসিন্দারা। এরপর আনুমানিক ৭০ থেকে ৮০ বছর পার হলেও ফেরেননি তারা। গড়েও ওঠেনি কোনো বসতি।
এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৬৬ নম্বর মৌজায় অবস্থিত গ্রামটি। গ্রামে ২০৬টি খতিয়ানভুক্ত জমি আছে। এখানে বসতি ছিল, চাষাবাদও হতো। কিন্তু এখন পুরো গ্রামটিই জনশূন্য।
ওই এলাকার বলাবাড়িয়া গ্রামের প্রবীণ খালেক খান বলেন, ‘আমি নিজেও মঙ্গলপুর গ্রাম শূন্য হওয়ার বিষয়ে খুব একটা জানি না। তবে বাপ-দাদাদের কাছে শুনেছি, এক সময় এই মঙ্গলপুর গ্রামে মানুষ ছিল। অনেক বছর হয়ে গেল, সেখানে আর মানুষের বসতি হয়নি।’
স্থানীয় পাশপাতিলা গ্রামের আরেক প্রবীণ নিতাই চন্দ্র দাস বলেন, ‘শুনেছি মঙ্গলপুর গ্রামের নামকরণ করা হয় ওই গ্রামের মঙ্গল পাঠান নামের এক ব্যক্তির নামে। তার তিন একর জমির উপর বিশাল বাড়ি ছিল। তিনি এই গ্রামেই মারা যান। তার কবরও রয়েছে সেখানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গ্রামে সংখ্যালঘু মানুষ ছিল। অত্যাচারিত হয়ে গ্রাম ছেড়ে অনেকেই সেই সময় চলে যেতে বাধ্য হয় বলে শুনেছি।’
স্থানীয়দের ভাষ্যে, গ্রামটি জনশুন্য হওয়ার প্রধান কারণ ছিল গুটি বসন্ত। ৭০ থেকে ৮০ বছর আগে গ্রামটিতে গুটি বসন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক মানুষ এতে মারা যায়।
বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসক, কবিরাজ, ওঝা নিয়ে এসেও গুটি বসন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে পালান বাসিন্দারা। সেই থেকেই ওই গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে যায়।
মঙ্গলপুরে নির্মাণাধীন উপহারের ঘর
বহু বছর ধরে বসতিহীন গ্রামটি অবশ্য আর জনমানুষ শূন্য থাকছে না। গ্রামটিতে আবারও বসতি গড়তে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় সাতটি ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।
ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গত মার্চে সেখানে বাড়ির কাজ শুরু হয়। কিছুদিনের মধ্যেই সুবিধাভোগীদের মাঝে এ ঘর হস্তান্তর করা হবে। পাশের বাগডাঙ্গা, পাশপাতিলা ও বলাবাড়িয়া গ্রামের সাতটি ভূমিহীন পরিবারকে এ ঘর দেয়া হবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজা বলেন, ‘ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। কিছুদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে বাসিন্দাদের মাঝে এগুলো হস্তান্তর করা হবে। আশা করি, গ্রামটিতে আবারও বসতি গড়ে উঠবে।’