চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে বহুল আলোচিত সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তাবিত হাসপাতালের নির্ধারিত স্থানে হঠাৎ করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
তবে নলকূপ স্থাপন বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক।
মঙ্গলবার বিকেলে নলকূপ স্থাপনের বিষয়টি জানাজানি হলে নানা প্রশ্ন ওঠে। গভীর নলকূপটি কখন স্থাপন করা হয়েছে সে বিষয়ে মুখ খুলতে কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজন রাজি হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআরবি এলাকার এক নারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি কখন স্থাপন করা হয়েছে জানি না। সারাদিন আমরা অফিসে থাকি। আজ হঠাৎ এইখানে নলকূপটি দেখতে পাচ্ছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক আমিন মুন্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার ১০১ বিশিষ্ট ব্যক্তি সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ না করার জন্য বিবৃতি দিয়েছেন। সেসব উপেক্ষা করে ওরা সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি হিসেবে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। ওইস্থান থেকে স্থানীয়দের উচ্ছেদের পর এখন গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়।’
তবে সিআরবিতে গভীর নলকূপ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা দিদারুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত চট্টগ্রাম মহানগরে নলকূপ ও গভীর নলকূপ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয় ওয়াসার বাণিজ্য বিভাগ থেকে। সিআরবিতে কোনো গভীর নলকূপ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি।’
সিআরবিতে গভীর নলকূপ স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নলকূপ স্থাপন সম্পর্কে জানি না। আমাদের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, তিনি জেনে থাকতে পারেন।’
প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তাগীনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও হাসপাতালের বিষয়টি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দেখেন বলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘সিআরবিতে গভীর নলকূপ স্থাপনের বিষয়ে আমি কিচ্ছু জানি না। হাসপাতালসহ এ সব বিষয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দেখেন।’
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আহসান জাবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তৎক্ষণিক কোনো তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি তথ্য নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি না। কিছু জানাতে পারবো না এখন, জানতে হলে অফিস চলাকালীন সময়ে যোগাযোগ করতে হবে।’
চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ১০১ জন পেশাজীবী নেতা।
সোমবার বিকেলে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের পক্ষে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সিআরবি চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিআরবি এলাকায় এ প্রকল্প স্থাপিত হলে নেতিবাচক প্রভাব শুধু প্রকল্পের নির্দিষ্ট স্থানেই সীমিত থাকবে না।
সময়ের প্রয়োজনে প্রকল্প এলাকা নতুন নতুন দালান, অবকাঠামো, দোকানপাট, পার্কিং, ফার্মেসি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের জন্য আবাসিক ভবনে ছেয়ে যাবে।
এতে পরিবেশদূষণ ঘটবে; পুরো সিআরবি এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পুরো এলাকাটিকে যানজট, কোলাহলপূর্ণ ও জঞ্জালময় পরিবেশে রূপ দেবে যা সিআরবির অনুপম ও প্রশান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। এটি দেশের সংবিধান ও পরিবেশ আইনবিরোধী একটি হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
পেশাজীবীরা বলেন, ‘নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে চাই, আমরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করি।’