রিকশা-ভ্যানে চড়েই বরিশাল ছাড়তে শুরু করেছেন কর্মস্থলমুখী মানুষ। ঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে এসব বাহনে তাদের গুনতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা।
তারা বলছেন, চাকরিস্থল থেকে জরুরি ডাক আসায় ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা যেতে হচ্ছে।
রিকশা-ভ্যান ও মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেককে ঢাকা অভিমুখে কয়েক কিলোমিটার হাঁটতেও দেখা গেছে।
রাজধানীমুখী বেশির ভাগ মানুষ সকাল থেকে জড়ো হন বরিশাল নগরীর কাশিপুরের সুরভী পেট্রলপাম্পের সামনে। সেখান থেকে কেউ রিকশা-ভ্যান, আবার কেউ মোটরসাইকেলে ঢাকার পথে রওনা দেন।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সামনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক ওয়াহাব মিঞা বলেন, ‘সবকিছু তো বন্ধ। মাহিন্দ্রা সিএনজিও চলে না। এর লইগ্গা মুই ভ্যান লইয়া নামছি। একটা ট্রিপ হইলেই হয়। ভাড়া বেশি না, পার ম্যান ৭০০ থেকে ৮০০ টাহা নিই। মুই একলা না আরও লোক মাওয়া যায়।’
ব্যাটারিচালত রিকশাচালক রিপন বলেন, ‘লকডাউন তো দেছে সরকার, এহন মোগো তো বাঁইচা থাকতে হইবে। এইর জন্য মোরা নামছি রিকশা চালাইতে। অনেক লোক সকাল হইতেই কাশিপুরে আইয়া দাঁড়াইয়া থাহে, নথুল্লাবাদ তো দাঁড়াইতে পারে না পুলিশের লইগ্গা।
‘মোর যে টাহায় পোষায় হেই টাহায় মাওয়া যাই। তয় পথে চার্জ দেয়া লাগে ব্যাটারিতে। পুলিশে রাস্তায় ডিস্টার্ব করে না। তয় বড় গাড়ি থামায়।’
রিকশা-ভ্যানে চড়েই বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে অনেককে। ছবি: নিউজবাংলারাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বরিশালে বাড়িতে এসেছিলাম। এখন অফিস থেকে জরুরিভাবে যেতে বলেছে। চাকরি বাঁচাতে যেভাবে হোক ঢাকায় যেতেই হবে, সেই টার্গেট নিয়েই বের হয়েছি।
‘কোনো যানবাহন পাইনি। পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ায় ভ্যান ভাড়া করেছি। ভ্যানচালক প্রতিজন ৫০০ টাকায় রাজি হয়েছেন। এখান থেকে মাওয়া যাব, তারপর ফেরি পার হয়ে বিকল্প উপায়ে ঢাকায় পৌঁছাব।’
রাজধানীর একটি সফটওয়্যার কোম্পানির কর্মী সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আমতলার মোড় থেকে ছোট ছেলেকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত এসেছি। ঢাকায় যাওয়ার কোনো উপায় পাইনি। ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা দুই হাজার টাকায় ভাড়া করেছি। চালক মাওয়া ঘাট পর্যন্ত দিয়ে আসবেন। খুব ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি, তবে পেটের দায়ে যেতেই হবে।’
বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল অংশে অনেক চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেকপোস্ট অতিক্রম করে ঢাকায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকে গ্রামগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের আবারও হাইওয়েতে উঠতে হচ্ছে। অতএব এভাবে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
সোমবার বরিশাল থেকে ভ্যানে করে মাওয়া পৌঁছান সুভাষ চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘বরিশালের কাশিপুর থেকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানে মাওয়ার পথে রওনা হই। তবে পথে কোনো বিভ্রান্তি হয়নি। চেকপোস্টগুলোতে মাইক্রোবাস আর প্রাইভেট কার চেক করতে দেখেছি। আমাদের কোথাও থামায়নি। শুধু মাঝপথে টেকেরহাট বসে ভ্যানে চার্জ দিতে হয়েছে।’
করোনা সংক্রমণ রোধে ঈদুল আজহার ছুটির পর গত শুক্রবার থেকে সারা দেশে চলছে কঠোর লকডাউন।