বরগুনার আমতলী বকুল নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার বিরুদ্ধে বিএ পাসের জাল সনদ দিয়ে ১৩ বছর চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে।একই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান বরগুনা জেলা প্রশাসক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিত অভিযোগ আকারে জানিয়েছেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বকুল নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়া ১৯৯৩ সালে আমতলী ডিগ্রি কলেজ হতে স্নাতক (বিএ পাস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। সেই বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমতলী ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাশের একটা সার্টিফিকেট তৈরি করে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এমএ পাশ করেন।
জাল সার্টিফিকেটের বিষয় জানাজানি হলে বকুল নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রণব কুমার সরকার মো. ফোরকান মিয়ার বিএ পাশের সার্টিফিকেটের বৈধতা যাচাইর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর আবেদন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর বকুল নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেন, মো. ফোরকান মিয়ার ব্যাচেলর অব আর্টস ১৯৯২ সেকেন্ড ডিভিশন সনদটি জাল। ওই সনদটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস হতে ইস্যু করা হয়নি। এ ছাড়া আমতলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মজিবর রহমান একই বছর ৩ অক্টোবর একটি প্রত্যয়ন দেন যে, মো. ফোরকান মিয়া, বাবা মো. সেকান্দার আলী হাওলাদার, গ্রাম হুলাটানা, উপজেলা আমতলী, জেলা বরগুনা ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে বিএ পাস শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত ১৯৯৩ সালের নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়েছেন।তার পরীক্ষার রোল নম্বর ৬৫৮ এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫৩৭৫০।
এ দিকে মো. ফোরকান মিয়া জাল সার্টিফিকেট দিয়ে দীর্ঘদিন চাকরি করার পরে ওই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। পরে কলেজের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুসারে ফোরকান মিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই জালিয়াতির মামলা করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান।
সেই মামলায় ফোরকান মিয়াকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ফোরকান মিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট বিএ পাসের একটি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে কলেজে জমা দেন। ওই সার্টিফিকেটের বৈধতা যাচাই বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বরাবরে আবেদন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কমিশনের উপপরিচালক জেসমিন পারভিন ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর এক চিঠিতে জানান, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামক তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদিত নয়।
এ দিকে ফোরকান মিয়া তার বকেয়া বেতন ভাতা পাবার জন্য এবং অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ফোরকান মিয়ার স্থলে নতুন করে কোনো অধ্যক্ষ নিয়োগ না দেয়ার আদেশ দেন।
চলতি বছরের ১৯ জুলাই গভর্নিং বডির নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মাকসুদা আকতার জোসনা ফোরকান মিয়াকে কলেজে নিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দেন। সেই থেকে ফোরকান মিয়া ফের কলেজের কার্যক্রম চালানো শুরু করেন। এ ব্যাপারে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান বলেন, ‘সনদ জালিয়াতিতে ধরা খেয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের পরও ফোরকান মিয়া পুনরায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন। আমি বিস্তারিত বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে অভিযোগ জানিয়েছি।’এ ব্যাপারে মো. ফোরকান মিয়া বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। আমি বৈধ অধ্যক্ষ হিসাবে এখন কলেজে কাজ করছি।’
কী ভাবে বিএ পাশ না করে এমএ পাশ করলেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেছি।’এ ব্যাপারে কলেজের বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি মোসা. মাকসুদা আক্তার জোসনা বলেন, ‘আমি তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে বসিয়েছি এমন অভিযোগ সত্য নয়। আদালত নতুন করে অধ্যক্ষ নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়ায় তিনি আইনগতভাবে বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন। ফোরকান মিয়া আইনগতভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে থাকতে পারলে আমাদের কমিটি তাকে গ্রহণ করবে। অন্যথায় আইনগত ভাবে যা হবার তাই হবে।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নতুন এডহক কমিটি গঠন এবং সাবেক অধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়েছেন। তবে নতুন কমিটির কেউ জানাননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে কোন ধরনের আইনের লঙ্ঘন হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জানানো হবে।’