বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যমুনার বাঁকে বাঁকে ভাঙছে ঘরবাড়ি; স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২১ ১৬:৪৬

স্থানীয় জুয়েল হাসান জানান, জিও ব্যাগগুলো ফেলা হয়, কিন্তু যমুনার তীব্র ঘূর্ণাবর্ত স্রোতে তলিয়ে যায়। পাউবো বারবার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

অসময়ে পানি কমতে থাকায় যমুনা নদীর বাঁকে বাঁকে ভাঙন শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের চার উপজেলায় এবারের বর্ষায় এরই মধ্যে শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা ও ফসলি জমি যমুনার গর্ভে চলে গেছে।

তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার ঘূর্ণাবর্ত স্রোতের বেগ কমানোর চেষ্টা করছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় বর্ষার শুরুতেই যমুনার ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে শতাধিক বাড়িঘর, তাঁত ফ্যাক্টরি, সমিল ও হাট যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ১২ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত যমুনায় পানি কিছুটা কমেছে। যমুনায় পানি কমার সময়ও টাঙ্গাইলের চার উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আরও অনেক বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।

যমুনা তীরের বাসিন্দা হাসান শিকদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনার পশ্চিম পাড় মানে নদীর ডান তীরে সিরাজগঞ্জের অংশে ‘চায়না বাঁধ’ নির্মাণ করায় পানির স্রোত ওই বাঁধে বাধা পেয়ে পূর্ব পাড় অর্থাৎ নদীর বাম তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও নাগরপুর উপজেলার অংশে যমুনার বাঁকে বাঁকে ব্যাপক ভাঙন হচ্ছে। এ ছাড়া ভূঞাপুর অংশেও ভাঙনের তীব্রতা রয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ১৮টি গ্রাম, নাগরপুর উপজেলার প্রায় ৯টি গ্রাম, কালিহাতী উপজেলার আলীপুর, ভৈরববাড়ী ও ভূঞাপুর উপজেলার ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি।

পানি কমায় কালিহাতী উপজেলার আলীপুর মাদ্রাসার অর্ধেক, আলীপুর জামে মসজিদের অজুখানাসহ কিয়দাংশ, আলীপুর হাটের দুই-তৃতীয়াংশ গত ৩ দিনের ভাঙনে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

আলীপুরের এসব স্থাপনা ভাঙন রোধে পাউবো ২৫০ মিটার এলাকায় জরুরিভাবে তিন দফায় প্রায় ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছে। যমুনার ঘূর্ণাবর্ত তীব্র স্রোতে জিও ব্যাগের সাময়িক বাঁধ ভেঙে স্থাপনা, বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে আঘাত হানছে।

যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় সদর উপজেলার চরপৌলী হাটখোলা সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাটখোলাটি রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ৩০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে।

স্থানীয় জুয়েল হাসান জানান, জিও ব্যাগগুলো ফেলা হয়, কিন্তু যমুনার তীব্র ঘূর্ণাবর্ত স্রোতে তলিয়ে যায়। পাউবো বারবার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকা উত্তর চরপৌলী ও আলীপুর গ্রামের অংশে অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়কের (নর্দান প্রজেক্ট) প্রায় ৬০০ মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।

নদীতীরের বাসিন্দারা আরও জানান, শত শত একর ফসলি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই তাদের বাড়িঘর, গাছপালাসহ গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

তাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। যমুনার সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনযাপন করছেন নদীপাড়ের মানুষ।

ভাঙনকবলিত এলাকার শাহীন তালুকদার জানান, নদীতীরে বিকেলে যা দেখা যায় সকালে তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। রাতে ঘুমাতে গেলেও মাঝরাতে উঠে অনেকে ঘর সরায়। বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান সবই গেছে যমুনায়।

এদিকে কালিহাতীর দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক, সদরের কাকুয়া ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ জনপ্রতিনিধিরা জানান, যমুনায় পানি বাড়লেও পাড় ভাঙে, আবার কমলেও ভাঙে। যমুনার স্রোত ঘূর্ণাবর্ত তাই ভাঙেও বেশি। তারা দীর্ঘদিন ধরে যমুনার বাম তীরে মাহমুদনগর ইউনিয়নের গোলচত্বর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কানে তুলছে না।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের বিশাল এলাকা প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনের শিকার হয়। এ ভাঙন রোধে তিন বছর আগে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

‘দীর্ঘ তিন বছরেও প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। যমুনার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর