বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উপজেলা করায় তিন থানায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০৫

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে সোমবার তিন থানাকে উপজেলা করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।

দেশের নতুন উপজেলা হিসেবে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, মাদারীপুরের ডাসার ও সুনামগঞ্জের মধ্যনগরকে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে সোমবার এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।

থানা থেকে উপজেলা হওয়া এসব এলাকার বাসিন্দারা এ খবরে উচ্ছ্বসিত। উপজেলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দ মিছিলের পাশাপাশি বিতরণ করা হয়েছে মিষ্টি।

ঈদগাঁও উপজেলা: কক্সবাজার সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর, পোকখালি ও জালালাবাদকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে ঈদগাঁও উপজেলা।

ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান বলেন, ‘ঈদগাঁওকে উপজেলা করতে বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নুরুল আজিমের অবদান কখনও ভুলবার নয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিয়মিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগের জন্য ঈদগাঁওবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবে।’

স্থানীয় সরকার সচিব হেলাল উদ্দীন আহমদের ভূমিকাকে অবিস্মরণীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনাব হেলাল উদ্দীন না থাকলে ঈদগাঁওবাসীর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেত। তার কৃতিত্বের কারণেই ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা।’

উপজেলা ঘোষণার পর খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন ঈদগাঁওয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। প্রকাশ করেন উচ্ছ্বাস।

ঈদগাঁও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বদিউল আলম আকাশ বলেন, ‘জন্মের পর থেকে শুনছি, ঈদগাঁওকে উপজেলায় রূপান্তর হবে। শুনতে শুনতে মাঝেমধ্যে আমরাই বিরক্ত হতাম।

‘অনেকে উপহাস করত বিভিন্নভাবে। কিন্তু তা সত্যি হলো। অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এর আগে থানা পেয়েছি, এখন উপজেলা। এর পেছনে যারা কাজ করেছেন, তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’

পোকখালী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শওকত ওসমান বলেন, ‘আগে কোনো প্রয়োজনে রামু উপজেলা পেরিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলায় যেতে হতো।

‘এখন ঈদগাঁও উপজেলা হওয়ায় আগের চেয়ে সময়ও বাঁচবে, সুযোগসুবিধাও বেশি পাব।’

ইসলামাবাদ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজ বজলুর রহমান বলেন, ‘ঈদগাঁও একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। এখানে প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। এ মানুষগুলো অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।

‘একটি সরকারি স্কুল-কলেজ নেই। নেই ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখন উপজেলা হওয়াতে এসব সুবিধা পাব। খুবই ভালো লাগছে, অনেক পরে হলেও দীর্ঘদিনের যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন হয়েছে।’

ডাসার উপজেলা: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানাকে উপজেলা ঘোষণা করায় আনন্দ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।

উপজেলার সিদ্ধান্ত আসার পর এলাকায় আনন্দ মিছিল করেন ডাসার থানা আওয়ামী লীগ, ডাসার উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয়রা।

কাজী বাকাই এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘এতদিন পর আমরা দ্বিমুখী প্রশাসনিক জাঁতাকল থেকে রক্ষা পেলাম। এখন থেকে আমরা থানা নয়, উপজেলার বাসিন্দা।’

বালিগ্রাম ইউনিয়নের শফিক আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা ঘোষণার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করবেন।’

ডাসার উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা সাংবাদিক বেলাল রিজভী বলেন, ‘ডাসার উপজেলা ঘোষণার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন এটি।

‘আশা করি, উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়নের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে। এ ছাড়া মাদারীপুরে আরও একটি উপজেলা বৃদ্ধি পাওয়ার জেলার গ্রেডও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

ডাসার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ডাসারবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, এ থানাকে উপজেলা ঘোষণা করা। দাবি পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

এক বিবৃতিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ‘নিকার সভায় প্রধানমন্ত্রী ডাসার থানাকে উপজেলা হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। এ ছাড়া মাদারীপুর জেলাকে ‘সি’ গ্রেড থেকে ‘বি’ গ্রেডের মর্যাদা দিয়েছেন। দুটি বিষয়ই আমার স্বপ্ন ছিল। তিনি আমাদের দীর্ঘদিনের এই কর্ম ও প্রচেষ্টাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’

‘বর্ষসেরা দুটি উপহার দেয়ার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই।’

২০১৩ সালে কালকিনি উপজেলার ডাসার, কাজী বাকাই, বালিগ্রাম, নবগ্রাম ও গোপালপুর ইউনিয়ন নিয়ে ডাসার থানা ঘোষণা করা হয়। এর আগে থেকেই একে উপজেলা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।

মধ্যনগর উপজেলা: হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জের ১২তম উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ধর্মপাশার অধীনে থাকা মধ্যনগর থানাকে।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৪ সালে মধ্যনগর, চামরদানী, বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ও বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন নিয়ে মধ্যনগর থানা গঠিত হয়। থানা হলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম ও চিকিৎসার জন্য ধর্মপাশা উপজেলায় যেতে হতো স্থানীয়দের।

২২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যনগর থানার লোকসংখ্যা দুই লাখের বেশি। এ থানার উত্তর সীমানার সঙ্গে ধর্মপাশা উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এতে সাধারণ মানুষ নানা অসুবিধায় পড়তেন।

১৯৮২ সালে মধ্যনগর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করাতে সাইট সিলেকশন কমিটি করা হলেও বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি।

মধ্যনগর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, ‘মধ্যনগর থানাকে উপজেলা করার দাবি আমাদের অনেক দিনের। আজকে আমাদের খুশির দিন। মধ্যনগর থানা থাকাকালীন অবস্থায় আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।

‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কাজ শুরু করা।’

থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনুজ কান্তি দে বলেন, ‘আমরার মধ্যনগরবাসী অনেক খুশি হইছি। আমরার আনন্দ মিছিল করছি। মিষ্টি বাটছি, এই খুশির খবরে।

‘অনেক দিনের স্বপ্ন আছিল আমরার মধ্যনগর উপজেলা করার। আজকে এই স্বপ্ন বাস্তব হইছে। এখন উপজেলার কার্যক্রম ও কাঠামো বানানির লাগি যেন দ্রুততার সাথে কাজ করা হয়, ওইটাই চাইমু।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘মধ্যনগর উপজেলা উপহার দেয়ায় আমার মধ্যনগরবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। দাবিটি অনেক দিনের ছিল।

‘আমি নিজেও মধ্যনগরকে উপজেলা করার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। আমাদের আনন্দের দিন এটি।’

শান্তিগঞ্জ নামে খুশি দক্ষিণ সুনামগঞ্জবাসী: নিকার সভায় তিন থানাকে উপজেলা করার পাশাপাশি সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ করার সিদ্ধান্তে খুশি এলাকাবাসী।

তারা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালে। তবে বিভিন্ন সময় দালিলিক ও প্রশাসনিক কাগজে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় বিভ্রান্তি ও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরে উপজেলার নাম পরিবর্তন করে শান্তিগঞ্জ করার দাবি জানানো হয়।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নাম পরিবর্তন হইয়া শান্তিগঞ্জ করায় খুশি হইছি অনেক। আমরার কাগজে অনেক সমস্যা অইত। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জাগাত দক্ষিণ সুরমা আইত্ত। তাই আমরা সবাই শান্তিগঞ্জ নাম চাচ্ছিলাম।’

তিনি জানান, শান্তিগঞ্জ নামটি একটি বাজারকে ঘিরে গড়ে ওঠে। যুদ্ধের অনেক পরে এখানে কয়েকটি ঘরবাড়ি নিয়ে একটি বাজার গড়ে ওঠে। সেই বাজারের নাম ছিল শান্তিগঞ্জ বাজার, পরে এটি শান্তিগঞ্জ গ্রাম হয়ে যায়।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ বলেন, ‘শান্তিগঞ্জ নামকরণ হওয়ায় ভালো হয়েছে সবার। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নামটি আমাদের জন্য সমস্যা হতো। বিভিন্ন কাজে নামটি বিভ্রান্তিতে ফেলে দিত। কাগজপত্রে ভুল হওয়ায় টাকা ও সময় দুটাই যাইত।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নাম শান্তিগঞ্জ হওয়ায় অনেক ভালো হয়েছে উপজেলাবাসীদের জন্য৷ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রচেষ্টায় আমরা দ্রুতই এর বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি।’

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিউজবাংলার কক্সবাজার প্রতিনিধি সাকিবুর রহমান ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি মোসাইদ আহমেদ রাহাত।

এ বিভাগের আরো খবর