করোনা সংকটের মধ্যেও শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। এরই মাঝে প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল উপাদান পারমাণবিক চুল্লি, স্টিম জেনারেটর এবং রিআ্যাকটর প্রেসার ভেসেল গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছায়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রথম ইউনিট বিল্ডিংয়ে নিউক্লিয়ার চুল্লি স্থাপন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
সম্প্রতি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান রূপপুর প্রকল্প পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, গত এক বছরে মহামারি চলাকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের শিডিউল অনুসারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
এরই মধ্যে, প্রথম ইউনিটের পাশাপাশি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও সাবলীলভাবে চলছে। করোনা মহামারিতে একদিনের জন্যও কাজে কোন বিঘ্ন ঘটেনি।
ইয়াফেস ওসমান বলেন, “মহামারি শুরুর পর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ স্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলির অনুসরণে চলছে আমরা প্রকল্পের সমস্ত কর্মচারীকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনার পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান নাগরিকরা রাশিয়ান ভ্যাকসিন স্পুৎনিক ভি পাচ্ছেন এবং বাংলাদেশী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরাও রাশিয়ার সহায়তায় একই টিকা পাচ্ছেন।”
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেছেন, প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার স্থানীয়সহ প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক এই প্রকল্পে কাজ করছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করছে। শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য প্রকল্পের সাইটে পর্যবেক্ষণ এবং আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন করেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে প্রতিটি কর্মীর দিনে দুইবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। যদি কেউ সংক্রামিত হয় বা কোনও উপসর্গ দেখা যায় তবে তাদের এবং আশেপাশের লোকজনকে পর্যবেক্ষণ ও আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়।’
ড. শওকত বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরপত্তা ব্যবস্থা নেয়ায় মহামারির অবস্থা ক্রমেই খারাপ হলেও প্রকল্পটি থামছে না। আমরা ইতিমধ্যে দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৮ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি এবং শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করার প্রত্যাশা করছি।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সর্বোচ্চ নিরপত্তা ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে করে রুশ নকশার আওতায় রূপপুরে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুটি ভিভিআর-প্রযুক্তির রিএকটরের দুটি ইউনিট তৈরি হবে। শিডিউল অনুসারে ২০২৩ সালে ইউনিট-১, ২০২৪ সালের ইউনিট-২ চালুর জন্য সময় নিধারিত রয়েছে।
উল্লেখ্য ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ান ফেডারেশনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটোম পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করে। ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের প্রাথমিক চুক্তিটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সই করা হয়।