১৯ বছর পর দ্বিগুণের বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে ছোট মহানগর সিলেট সিটি করপোরেশন।
সোমবার সম্প্রসারণ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
দুপুরে কমিটির বৈঠকে সিলেট সিটি করপোরেশন সম্প্রসারণ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে ২৬ দশমিক ৫ বর্গ কিলোমটারের এ সিটি করপোরেশনের নতুন আয়তন হবে ৬০ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমান ২৭টি ওয়ার্ড বেড়ে দাঁড়াবে ৫২টিতে।
দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি বৈঠকটি হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যরা যুক্ত হন সচিবালয় থেকে।
২৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিলেট নগরীকে ২০১৪ সালে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। তখন নগরীর আয়তন বাড়িয়ে প্রস্তাব জমা দেয়া হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। দীর্ঘদিন আটকে ছিল এ প্রস্তাবনা।
গত বছর ১৭ নভেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিটি করপোরেশন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি বৈঠক হয়। তাতে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নগরীর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন তিনি। ওই বৈঠকের পর সিটি করপোরেশন সম্প্রসারণের উদ্যোগে গতি পায়।
সরকারি অনুমোদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম তা অনুমোদন হয়েছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ওয়ার্ড বিভক্তের পর গেজেট হবে।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৮৭৮ সালে পৌনে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে হয়েছিল সিলেট পৌরসভা। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে পরিধি বাড়ে। তখন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার করা হয় সিটি করপোরেশনের আয়তন। সিটি করপোরেশন গঠনের প্রায় এক যুগ পর এটি সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, সিলেট নগরীর বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। তবে নগরীর আশপাশের এলাকার আরও কয়েক লাখ বাসিন্দা সিটি করপোরেশনের সুবিধা ভোগ করেন। ওইসব এলাকা নগরীর ভেতরে না হওয়ায় বাসিন্দাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। এতে সিটি করপোরেশনের রাজস্বে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই সিটি করপোরেশনের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্যোগ নেয়ায় তা দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে।’তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে ছোট নগরী সিলেট সিটি করপোরেশন। আয়তন বাড়লে রাজস্ব, বরাদ্দ এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়বে।
২০১৪ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সিলেট সিটি করপোরেশনের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় উত্তরে খাদিমনগর চা বাগান, দলদলি চা বাগান ও সালুটিকর, দক্ষিণে শুড়িগাঁও, মামুদপুর, রুস্তমপুর, কালাইরচক, ঢুমশ্রী ও ছাত্তিঘর, পশ্চিমে চাতল, উত্তর ঘোপাল, কসকালিয়া, বাওনপুর, ইনায়েতপুর, হরিপুর, রঘুপুর, দর্শা, মেদিনীমহল, লক্ষ্মীপাশা, হাজরাই, তালিবপুর ও লক্ষ্মীপুর, এবং পূর্বে বটেশ্বর, বাঘা, হাতিমনগর, আমদরপুর, উত্তরভাগ, বাগরখলা, হিলালপুর, মাইজভাগ, দাউদপুর ও তিরাশিগাঁওকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
এ প্রস্তাবনা পাশ হওয়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। এরমধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার খাদিমপাড়া, টুলটিকর, টুকেরবাজার, খাদিমনগর ও কান্দিগাঁও ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই, বরইকান্দি, ও মোল্লারগাঁও ইউনিয়ন। এছাড়া গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের আংশিক এলাকা যুক্ত হতে পারে সিটি করপোরেশনে।