মাগুরার শ্রীপুরের বরিশাট গ্রামের চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দারা অজানা পোকার কামড় আতঙ্কে ভুগছেন দুই সপ্তাহেরও বেশি সময়। তারা পোকার কামড়ে শরীরে জ্বালাপোড়ায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
কী ধরনের পোকার উপদ্রব সেখানে, আদৌ কোনো পোকার কামড় নাকি এটি অন্য কোনো ঘটনা, এসব কিছু খতিয়ে দেখতে ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে ওই গ্রাম ঘুরে দেখছেন স্বাস্থ্য বিভাগের একদল চিকিৎসক।
জেলার সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ান এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে নিউজবাংলার মাধ্যমে জানতে পারি এই বিষয়টি। এরপর আমি স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করি। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলি।
‘তারপর মাগুরা ফিরে এসে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আহসান হাবিব সৌরভকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা সাত দিনের সময় চেয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলেছে। প্রতিবেদন পেলে আসলে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে, এটা কোন ধরনের পোকা।’
চৌধুরীপাড়ায় ঠিক কবে থেকে এই ‘পোকার’ উপদ্রব তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও বাসিন্দারা বলছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এমন হচ্ছে।
ওই এলাকায় রোববার গিয়ে দেখা যায়, বাসিন্দাদের চোখমুখে আতঙ্ক। তাদের সঙ্গে আলাপকালে পাশের একটি বাড়ি থেকে চিৎকার শোনা যায়।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এক গৃহবধূ পায়ে পোকার কামড় খেয়েছেন বলে চিৎকার করছেন। তার পায়ে লাল দাগও দেখা গেছে।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, রান্নাঘরে কাজ করার সময় কিছু একটা উড়ে এসে তার বাম পায়ে কামড় দেয়। প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। এরপর তাকিয়ে দেখেন পায়ে দাগ। তখন তার ঝিমঝিম লাগতে থাকে।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ‘পোকার কামড়’ খাওয়া সবার নয়, তবে অনেকেরই পায়ে পাশাপাশি সূক্ষ্ম দুটি লালচে ছিদ্র; সুচ ফোটালে যেমন হয়, তেমন।
তবে ওই কামড় খাওয়ার পর সবাই মূলত স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক ও ওঝার কাছে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, ওঝা ঝাড়ফুঁক করলেই সেরে উঠছেন।
গ্রাম্য চিকিৎসক ও ওঝা আনসার শেখ বলেন, ‘গত ১৫ দিনে তিন শরও বেশি ভুক্তভোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। শুধু বরিশাট না; আশপাশের অনেক এলাকায় এটা ছড়িয়েছে।’
স্থানীয় জব্বার মিয়া বলেন, ‘ঈদের আগের দিন রাত ২টায় আমি কামড় খেয়েছি। শরীর কাঁপুনিসহ কামড়ানোর স্থানে প্রচুর জ্বালাপোড়া করছিল।
‘তারপর ওঝার কাছে গেলে সে ঝাড়ফুঁক দিয়ে ঠিক করে দেয়। এখন আমি মোটামুটি সুস্থ আছি।’
এই ‘পোকার’ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গঠিত দলের প্রধান চিকিৎসক আহসান হাবিব সৌরভ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি পুরো গুজব বলা যাবে না। কারণ, আমরা ওই এলাকায় অনেকের শরীরে পোকায় কামড়ের চিহ্ন পেয়েছি, যা দেখে আমরা ধারণা করছি, এটি বিশেষ ধরনের একটি পোকা, যার মুখে ধারালো দাঁত আছে। সেই ধারালো দাঁতে রয়েছে বিষজাতীয় কিছু।’
সৌরভ জানান, পোকার কামড়ে গুরুতর কোনো সমস্যা কারও হয়নি। হাসপাতাল কিংবা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগে কেউ যোগাযোগও করেননি। তাতে বোঝা যাচ্ছে এটি কোনো মারাত্মক পোকা নয়; বেশির ভাগ ব্যক্তিই আতঙ্কে অসুস্থ হচ্ছেন।
তবে কী ধরনের পোকা এটি, তা জানতে পোকা বিশেষজ্ঞ আনার সুপারিশ স্বাস্থ্য বিভাগে করেছেন তিনি।
সৌরভ বলেন, ‘আমরা ওই এলাকা ঘুরে ভুক্তভোগীদের পরীক্ষা করে দেখেছি। শরীরে লাল দাগ হলেও তারা মনে করছে এটা সেই অদৃশ্য পোকার কামড়। আসলে ১০ জনে দেখা গেছে ৪ জনকে কামড় দিয়েছে।
‘বাকিরা ভয়ে মনে করছে তাকেও কামড় দিচ্ছে। সাধারণ পোকার কামড় খেলেও এখন তাদের মনে হচ্ছে এই পোকার কামড়।’