বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাটডাউনে আ. লীগ প্রার্থীর জনসভা

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২১ ০২:০৮

বিধিনিষেধের কারণে ঈদে বাড়িতে যাওয়া মানুষ যখন কর্মস্থলে ফিরতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তখন ঢাকা থেকে সিলেটে এসে জনসভা করছেন নেতারা। হাবিবের সমর্থনে ওই জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক; প্রধান বক্তা সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। জনসভায় অংশ নিতে রোববার দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সিলেট আসেন তারা।

বিশাল সমাবেশ চলছে। খোলামাঠে জড়ো হয়েছেন হাজারখানেক লোক। গাদাগাদি করে আছেন সবাই। মিছিল নিয়ে আসছেন আরও অনেকে। মঞ্চেও নেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মঞ্চ ও মঞ্চের সামনে সমবেত হওয়া বেশির ভাগের মুখেই মাস্ক নেই।

এই দৃশ্য রোববার বিকেলের। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে যখন শাটডাউন হিসেবে পরিচিত কঠোর বিধিনিষেধ চলছে তখন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় মাঠে চলছে এই জনসভা।

শাটডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে মামলা-জরিমানাও করা হচ্ছে। ২৩ জুলাই থেকে ঘোষিত এই শাটডাউন সবচেয়ে কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

এমন ‘কঠোর’ শাটডাউনের মধ্যে বালাগঞ্জের এই সমাবেশের আয়োজন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। তার সমর্থনেই এই নির্বাচনি জনসভা। এমনকি শাটডাউনের নির্দেশনা ভেঙে ঢাকা থেকে এসে এই জনসভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

বিধিনিষেধের কারণে ঈদে বাড়িতে যাওয়া মানুষ যখন কর্মস্থলে ফিরতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তখন ঢাকা থেকে সিলেটে এসে জনসভা করছেন নেতারা। হাবিবের সমর্থনে ওই জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক; প্রধান বক্তা দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। জনসভায় অংশ নিতে রোববার দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সিলেট আসেন তারা।

আ. লীগ প্রার্থী হাবিবের সমাবেশে হাজারো লোকের সমাগম

এই সমাবেশটি যেদিন আয়োজন করা হয়, সেদিনই, অর্থাৎ রোববার দুপুরে মারা গেছেন সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

উপনির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ইসরাইল হোসেন। তিনি এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন। নির্বাচনি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে তিনিসহ দুইজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হন। এ কারণে তাদের নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দুজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে ইসি।

এমন অবস্থায়ও বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনে শাটডাউন ও বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে চলছে ব্যাপক প্রচার। কেবল রোববার বিকেলে বালাগঞ্জের সমাবেশ নয়, গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই এই তিন উপজেলায় সভা-সমাবেশ, মিছিল-গণসংযোগ করছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। এসব প্রচারে ব্যাপক লোকসমাগমও হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে এই নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চয়ন চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন মারা গেছেন। অথচ আইন ও সংবিধানের দোহাই দিয়ে চলমান শাটডাউনের মধ্যেই ভোট গ্রহণ করতে মরিয়া নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন আর কতজনের জীবন নেবে?’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে ভারতে নির্বাচন আয়োজন কী ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল তা আমরা দেখেছি। ভোট গ্রহণ ও প্রচারে অংশ নিয়ে এখনও অসংখ্য মানুষ হুমকিতে আছেন।’

উপনির্বাচনের জন্য ভোটের দিন নির্বাচনি এলাকায় শাটডাউন শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে ২৮ জুলাই ছাড়া বাকি দিনগুলোতে শাটডাউনের নির্দেশনা বহাল রয়েছে।

২৪ জুলাই সিলেটে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাও নির্বাচনি কার্যক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন।

ওই দিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন।

তবে এসব কঠোরতার কোনো বালাই নেই নির্বাচনি এলাকায়।

রোববারের আগে শনিবারও হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থনে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে বিশাল সমাবেশ করা হয়। এতে কয়েক শ লোক অংশ নেন। এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল।

এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই হাবিবের সমর্থনে নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, সমাবেশ, পথসভা ও গণসংযোগ করা হচ্ছে।

রোববার হাবিবের সমর্থনে বালাগঞ্জের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাবেশে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছি। নিজেরা মাস্ক পরেছি। সমাবেশে আসা মানুষজনের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ছিল। তবে অনেক লোকের সমাগম হওয়ায় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয়নি।’

শাটডাউনের মধ্যে এমন সমাবেশের আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় তো প্রার্থীরা প্রচার চালাবেনই। তা ছাড়া নির্বাচনের কারণে এই এলাকায় বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলও করা হয়েছে।’

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। প্রচারে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিবই এগিয়ে রয়েছেন। তবে অন্য প্রার্থীরাও খুব পিছিয়ে নেই। বিশেষত জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ও মোটরযান প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরীও ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের প্রচারে মানা হচ্ছে না শাটডাউনের বিধিনিষেধ।গত শনি ও রোববার দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ও বালাগঞ্জের গৌরিপুরে নির্বাচনি জনসভা করেন শফি আহমদ চৌধুরী। তার জনসভায়ও শতাধিক মানুষ গাদাগাদি করে অংশ নিতে দেখা গেছে। যাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধিও।

বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরীর জনসভা

তবে শফি চৌধুরীর দাবি তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রচার চালাচ্ছেন।

একই দাবি করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘শাটডাউনের বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমি প্রচারণা চালাচ্ছি। জনসমাগম এড়িয়ে চলছি। কিন্তু অন্য প্রার্থীরা তা মানছেন না। বিশেষত আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিদিনই নির্দেশনা অমান্য করে জনসমাগম করছেন। এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল মেলেনি।’

ডাব প্রতীকে নির্বাচনে প্রার্থী হলেও তেমন প্রচার নেই বাংলাদেশের কংগ্রেসের নেতা জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া।

করোনার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে এই ধরনের জনসভা সম্পর্কে জানতে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সঙ্গে রোববার রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, নির্বাচনি বিধিবিধান ও সরকারি বিধিনিষেধ লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করার জন্য নির্বাচনি এলাকায় বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো অনিয়ম পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।’

সাধারণ মানুষ রাস্তায় বের হলে যেখানে জরিমানা করা হচ্ছে, সেখানে কীভাবে বিশাল জনসভা করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজমুল ইসলাম বলেন, ‘তারা উঠান বৈঠকের আয়োজন করেছিল। এটাকে সমাবেশ করে ফেলেছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি।

‘নির্বাচনের কারণে আমাদেরও কিছু বিষয় এড়িয়ে যেতে হচ্ছে। শাটডাউনের বিধিনিষেধ পালনে কঠোর হতে পারছি না। তারপরে সমাবেশস্থলে আমাদের একাধিক মোবাইল টিম ছিল। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে উৎসাহিত করেছি।’

এ বছরের ১১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

২৮ জুলাই ইভিএম পদ্ধতিতে এই আসনে ভোট হবে। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি।

এ বিভাগের আরো খবর