কথা, চুল, পোশাক সবই ছেলেদের মতো। দেখে বোঝার উপায় নেই ১৫ বছরের কোনো কিশোরী। ছেলেদের বিভিন্ন নাম বলে সেই কিশোরী অন্য মেয়েদের সঙ্গে গড়ে তুলত প্রেমের সম্পর্ক। এরপর বিয়েসহ নানা প্রলোভনে অপহরণের পর তুলে দিত তার মা, বাবা ও সৎ মায়ের হাতে।
অপহৃত সেই মেয়েদের পরে যৌনপেশায় বাধ্য করাসহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতেন তারা। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে এ চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দুজন এবং রোববার আরও দুজনকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।
পুলিশ জানায়, ১৬ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণের পর তার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হলেন মা মুক্তা বেগম, বাবা রবিউল, সৎ মা শাকিলা এবং ওই কিশোরী।
পুলিশ জানায়, রায়হান নাম নিয়ে ওই কিশোরী প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ১৬ বছরের আরেক কিশোরীকে। এরপর বিয়ের কথা বলে তাকে ডেকে নিয়ে মা মুক্তা বেগমের হাতে তুলে দেয়।
অপহরণের শিকার কিশোরীর বাবা পুলিশকে জানালে শনিবার জেলার সদর থানার জোর পুকুরপাড় পূর্বপাড়া কাজলের বাড়ি থেকে তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারের পর ওই কিশোরী জানায়, ছেলে সেজে তার সঙ্গে প্রেম করেছিল মুক্তা বেগমের ১৫ বছরের মেয়ে। এতে সহযোগিতা করতো ওই কিশোরীর বাবা রবিউল।
বুধবার ঈদের দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়হান পরিচয় দিয়ে মা, বাবা ও সৎ মাসহ তাকে অটোরিকশায় করে নিয়ে যায় ওই কিশোরী।
কিশোরী বলে, ‘পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারি, আমার প্রেমিক রায়হান আসলে ছেলে নয় মেয়ে। তারা আমাকে তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতন করে খারাপ কাজ করার কথা বলে। আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’
মামলার তদন্ত কর্মকতা উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন জানান, ওই কিশোরী, মুক্তা, রবিউল ও শাকিলা সংঘবদ্ধ নারী ও শিশু পাচারকারী চক্র। তারা কৌশলে কিশোরী মেয়েদের অপহরণ করে যৌনপেশায় বাধ্য করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে পাচার করত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
টঙ্গীবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মেয়েটি খুবই স্মার্টলি ছেলেদের মতো কথা বলে। পোশাক, হেয়ার স্টাইল ছেলেদের মতো করে স্কুলপড়ুয়া ওই কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। পরে কৌশলে তুলে নিয়ে গিয়ে মা মুক্তার হাতে তুলে দেয়।’
ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় শনিবার ছেলে সাজা কিশোরী ও তার মা মুক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে অন্য দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার স্মৃতি ও মুক্তাকে আদালতে পাঠানো হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার রবিউল ও শাকিলাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।