‘আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। আমরা ভাবছিলাম লকডাউন পেছাবে, ওই জন্য আসছিলাম। নীলফামারী থেকে অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে আসলাম। খুব চিন্তা হচ্ছে ঢাকায় যাইতে পারব কি না।’
রংপুরের মডার্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন তৌহিদুর রহমান। তার মতো মডার্ন মোড়ে শত শত যাত্রী অপেক্ষা করছেন ঢাকায় যেতে।
অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রীদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। চাকরি বাঁচাতে তাদের ঢাকা যেতেই হবে। কিন্তু পরিবহন বলতে পাথরবোঝাই ট্রাকই ভরসা।
কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক জানান, এসব ট্রাক লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাথর বহন করে। কিন্তু অনেক চালক পাথর না এনে মডার্ন মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। একটি বড় ট্রাকে অন্তত ২০ জন যাত্রী নেয়া যাচ্ছে।
দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকরা প্রকাশ্যে হাঁকাচ্ছেন ‘ঢাকা যাইবেন ঢাকা, মাত্র ১ হাজার টাকা, ১ হাজার…।’
ফরহাদ হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘ভাই, যার প্রয়োজন তাকে তো যাবার লাগবে, কিসের ট্রাক কিসের গাড়ি। পুলিশ ধরবে ক্যামনি, বড় ট্রিপল আছে না? ওস্তাদরা জানে না কোথায় কোথায় পুলিশ আছে? যেখানে যেখানে পুলিশ আছে, সেখানে ট্রিপল দিয়ে ঢেকে নিয়ে যাবে, পুলিশ টেরই পাইবে না।’
ট্রাকে কোথা থেকে উঠতে হবে, জানতে চাইলে আব্দুর রহমান নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘ট্রাক আছে মডার্ন ব্রিজের ওপর। ২০ জন হলে গাড়ি ছাড়বে। কোনো সমস্যা নাই, গাড়িতে ওঠেন, ঘুমিয়ে যাবেন, বসে যাবেন, সব সুবিধা আছে, বৃষ্টিতে ভিজবেন না, ট্রিপল (ত্রিপল) দিয়ে ঢাকি রাখবে। প্রতিদিন এভাবে গাড়ি যায়। কোনো অসুবিধা হয় না।’
লালমনিরহাট থেকে ঢাকায় যাবেন সোহেল রানা। তিনি ঢাকায় ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের এক দিন আগে এসেছেন তিনি। ছুটি শেষ হয়েছে ২৫ জুলাই। সোমবার অফিস করতে হবে তাকে।
তিনি বলেন, ‘যেভাবে হোক আমাকে ঢাকা যেতেই হবে। চাকরি বাঁচাতে হবে। ১ হাজার চাচ্ছে। কী করি ভাবতে পারছি না। যেতেও তো হবে…।’
রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানার ওসি আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, ‘ট্রাকে লোকজন যাচ্ছে এমন ঘটনা আমাদের জানা নেই। কেউ এমন করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা এসব বিষয়ে কঠোর।’