বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জুতা কোম্পানির ২২ বাস ‘চলাচলের অনুপযোগী’, অহরহ দুর্ঘটনা

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২১ ০১:২২

সবশেষ গত ৯ জুলাই বরিশাল বিসিক টেক্সটাইল মোড়ে ফরচুন সুজ কোম্পানির একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাত পেরিয়ে দোকানে ঢুকে পড়ে। এতে অর্ক ও রবিউল নামের দুই শিশুসহ ৫ জন আহত হয়। অর্করে একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী একই দিন সড়কে বিক্ষোভ করেছে।

বরিশালের ফরচুন সুজ কোম্পানির কারখানার শ্রমিকদের যাতায়াতের ২৬টি বাসের ২২টি চলাচলের অনুপযোগী বলে অভিযোগ উঠেছে। লক্কর-ঝক্কর এসব বাসগুলো প্রতিনিয়ত পড়ছে দুর্ঘটনার কবলে।

সবশেষ গত ৯ জুলাই বরিশাল বিসিক টেক্সটাইল মোড়ে ফরচুন সুজ কোম্পানির একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকানে ঢুকে পড়ে। এতে অর্ক ও রবিউল নামের দুই শিশুসহ ৫ জন আহত হয়। অর্করে একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী একই দিন সড়কে বিক্ষোভ করেছে।

পেশাদার চালক নয় বরং কম বেতনের হেলপার দিয়ে বাসগুলো চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানানা, ৪০-৪৫ সিটের নতুন একটি বাস কিনতে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়। ফরচুন সুজ কোম্পানি সড়কে চলাচলের অনুপযোগী বাস ২ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখ টাকায় কিনে নেন। এ বিষয়ে চুক্তি করে দেন বাদশা নামের এক ব্যক্তি। বাদশার তত্ত্বাবধানেই ফিটনেসবিহীন বাসে শ্রমিক পরিবহন করে থাকে। কিছু বাস অন্য মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে চালায় এ কোম্পানি।

বাস মালিকদের ওই নেতা আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা হবে না কেনো, একজন পেশাদার বাস চালকের যে বেতন সেটা তো ফরচুন দেয় না। তারা মাসিক ৮ হাজার টাকায় তো আর বাস চালক পাবে না। তাই চালকদের অদক্ষ হেলপার দিয়েই বাস চালায়, আর যেখানে সেখানে এক্সিডেন্ট করে।’

সূত্র জানায়, বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার বিসিক শিল্প এলাকার ফরচুন সুজ কোম্পানিতে সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। তারা বরিশালসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দা। কোম্পানির ২৬টি বাস ঝালকাঠি, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকদের যাতায়াত সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব বাসের মধ্যে ২২টিই ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর। ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়ক ও নগরীতে যাতায়াত করছে বাসগুলো। আর দুর্ঘটনায় পড়ছে যখন তখন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফরচুন সুজের শ্রমিক পরিবহনকারী এসব বাস বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে যাতায়াত করে বাতিল হয়ে যায়। জোড়াতালির চেসিস ও ইঞ্জিন আর ভাঙাচোরা বডি ২ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বাস মালিকদের কাছ থেকে কিনে নেয় ফরচুন সুজ।

ফরচুন সুজ কোম্পানির বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাত পেরিয়ে দোকানে ঢুকে পড়লে এলাকাবাসী সড়কে বিক্ষোভ করে

কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রনি বলেন, ‘বাসের যারা হেলপার থাহে তাগো দিয়া এই বাসগুলা চালাইন্না হয়। একদিকে বাসে যারা থাহে ওনাগোও ঝুঁকি আর যারা বাইরে থাহে হেগো তো আরও সমস্যা। কইতে গেলে কাউনিয়ায় ডেইলিই এক্সিডেন্ট করে ফরচুনের বাস। কোনো দিন রিকশা ধাক্কা দেয় আবার কোনোদিন সাইকেল ধাক্কা দেয়। আবার অনেক সময় তো চাপা দিয়া মানুষই মাইরা হালায়।’

তিনি বলেন, ‘৯ জুলাই হেইয়াই করছে ফরচুনের বাস। বিসিক টেক্সটাইল মোড়ে ফরচুন সুজ কোম্পানির শ্রমিক থাহা একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া ফুটপাত এবং পাশে থাহা হাবিবের দোকানে ঢুইকা যায়। এইতে অর্ক ও রবিউল নামের দুই শিশুসহ ৫ জন আহত হয়। তয় এইয়ার মধ্যে শিশু অর্কর পা বিচ্ছিন্ন হইয়া গেছে এই এক্সিডেন্টে। পোলাডার খুব খারাপ অবস্থা।’

স্থানীয় লোকজন জানান, গত ৫ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের গুঠিয়া বাজার এলাকার গাঙ্গুলীর মোড়ে ফরচুন সু কোম্পানির একটা বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা লাগে। এতে বাসের অনেক শ্রমিক গুরুতর আহত হন।

২০১৮ সালের ১৫ জুলাই বিসিক এলাকায় ফরচুন সুজের বেপরোয়া বাসের চাপায় বেকারি কর্মচারী জসিম সরদার নিহত হয়েছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রনি জানান, দুই শিশুসহ ৫ জন আহতের ঘটনায় শুক্রবার এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে।

জেবুন্নেছা বেগম নামে একজন বলেন, ‘ওনরা টাহা দিয়া সব ঢাকতে চায়। এত টাহা ওনাগো, ওনরা কি ভালো বাস কেনতে পারে না। ভালো ড্রাইভার রাখতে পারে না। ফরচুনের বাস আইলে মোরা ১শ হাত দূরে সইরা যাই। একটারে তো একবার মাইরাই হালাইছে। পঙ্গু হইতাছে পোলাপান ওনাগো লইগ্গা। টাহা দিয়া সব কিছু হয় না।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে ফরচুন সুজ কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের টোটাল ২৬টি বাস রয়েছে। এ ছাড়া কোভিডকালীন আরও ৬টি বাস ভাড়া নেয়া হয়েছে শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য। ২৬টি বাসের মধ্যে ৪টি কোম্পানির। বাকি বাসগুলো একজন ব্যক্তির সঙ্গে কন্টাক্ট করে চালাচ্ছি। তবে আমাদের তদারকি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে এসব বাসের ফিটনেস রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যেটা করণীয় সেটা করব আমরা। তা ছাড়া শুক্রবার দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়েছে তাদের সকলের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার পুরোটাই আমার কোম্পানি বহন করবে।’

কাউনিয়া থানার সহকারী কমিশনার মো. ইব্রাহিম জানান, শুক্রবার দুর্ঘটনা কবলিত বাস এবং ড্রাইভার আটক রয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তারও আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জাকির আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন বাস সড়কে চলার অনুমতি নেই। আমরা এ ক্ষেত্রে বেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর