বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিআরবি রক্ষার দাবি ১০১ নাগরিকের

  •    
  • ২৪ জুলাই, ২০২১ ২৩:০২

বিবৃতিতে তারা বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে বন্দরনগরীর ফুসফুস খ্যাত চিরসবুজ সিআরবিতে শুধু হাসপাতাল নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা করা সমীচীন হবে না। প্রকৃতি ও পরিবেশবিনাশী সব কর্মকাণ্ডই হবে আত্মবিধ্বংসী।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্প চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ১০১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

শনিবার বিকেল ৫টার দিকে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের ব্যানারে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর সিআরবি ভবনটি হয় ১৮৯৫ সালে। শতবর্ষী বৃক্ষসমৃদ্ধ পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এলাকাটি জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আশপাশের পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর আবাস। শিরীষ গাছের তলায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান; বসে মেলা, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বলীখেলা। সড়কের বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং রাস্তাটির দুই পাশের প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার (একতলা সেমিপাকা) নিয়ে ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। উঁচু দালান আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইট-পাথরের শহরে শতবর্ষী বৃক্ষে ঘেরা সিআরবিকে এক টুকরো অক্সিজেন প্ল্যান্ট বলা চলে।

পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করতে গেলে শতবর্ষী অনেক গাছ কাটা পড়ার পাশাপাশি এখানকার সবুজ নিসর্গ ধ্বংস হয়ে যাবে।

হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রবের কবর, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। মুক্তিযুদ্ধে এই সিআরবিতে অনেকে শহীদ হয়েছেন। রেলের অনেক শ্রমিক কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এই সিআরবি তথা পাহাড়তলী ছিল বিপ্লবের সূতিকাগার। সেই সব স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহীদের কবর, শহীদের নামে কলোনি, শহীদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে।

তারা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন। তার সুশাসনকে কলঙ্কিত করার জন্য প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী আমলা রেলের সরকারি জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল প্রকল্প নেয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে।

সিআরবি এলাকায় এই প্রকল্প হলে নেতিবাচক প্রভাব শুধু প্রকল্পের নির্দিষ্ট স্থানেই সীমিত থাকবে না। সময়ের প্রয়োজনে প্রকল্প এলাকা ঘিরে নতুন নতুন দালান, অবকাঠামো, দোকানপাট, পার্কিং, ফার্মেসি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের জন্য আবাসিক ভবনে ছেয়ে যাবে। ফলে পরিবেশদূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে।

প্রকল্পটি পুরো এলাকাটিকে যানজট, কোলাহলপূর্ণ ও জঞ্জালময় পরিবেশে রূপ দেবে, যা সিআরবির অনুপম ও প্রশান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক ধারা অনুসারে রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে। সিআরবি এলাকায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।

তা ছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিআরবিতে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা মাস্টারপ্ল্যানের লঙ্ঘন। ১৯৯৯ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে চট্টগ্রাম নগরে মাস্টারপ্ল্যান কার্যকর করে সরকার। সেখানে সিআরবির মতো হেরিটেজকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে বন্দরনগরীর ফুসফুস খ্যাত চিরসবুজ সিআরবিতে শুধু হাসপাতাল নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা করা সমীচীন হবে না। প্রকৃতি ও পরিবেশবিনাশী সব কর্মকাণ্ডই হবে আত্মবিধ্বংসী।

চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানান তারা।

সিআরবি রক্ষায় বিবৃতি দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন, শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফি, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, প্রফেসর ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বার এন্ড কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সম্পাদক রুশো মাহমুদ, দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ ১০১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

এ বিভাগের আরো খবর