করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান ‘সবচেয়ে কঠোর’ লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে পরিবহনে যাত্রী চলাচলে। তবে মানিকগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করেছে অবৈধ হ্যালোবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ও রিকশা।
দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা দিলেই মিলছে যানবাহন। লকডাউন কার্যকরে প্রশাসন মামলা ও জরিমানা করলেও তা বিশেষ কাজে আসছে না।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষ এভাবে অবাধে চলাচল করলে করোনা সংক্রমণ কমবে না।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এবং কারণ ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা করায় শাটডাউনের প্রথম দিন শুক্রবার মানিকগঞ্জে ১০৪টি মামলা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৯৪ হাজার ৯৫০ টাকা।
শনিবার অবশ্য প্রশাসনের এসব কার্যক্রমের তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই মানুষজনকে অবাধে চলাচল করতে দেখা গেছে।
শনিবার বেলা ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ অবৈধ হ্যালোবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান ও পিকআপে মানিকগঞ্জ সিএনজিস্ট্যান্ডে আসছে।
এর পর হেঁটে মানিকগঞ্জ বাস টার্মিনাল যাচ্ছে। সেখানে থাকা হ্যালোবাইক, সিএনজি, রিকশা, ভ্যান, পিকআপে ঢাকায় আসছে যাত্রীরা। বিনিময়ে দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া।
সিরাজগঞ্জের চৌহালীর সাদিকুর রহমান জানান, গাজীপুরের বেসরকারি একটি কারখানায় চাকরি করেন তিনি। রোববার কারখানা খুলবে। এজন্য ভোরে বাড়ি থেকে রওনা দেন। অনেক কষ্টে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত এসেছেন। এখন পিকআপ বা মোটরসাইকেলের অপেক্ষা করছেন।
পাটুরিয়া এলাকার আবদুল খালেক বলেন, ‘ঈদের আগে ছুটিতে বাড়িতে আসছিলাম। এখন যাব গাজীপুরের চন্দ্রায়। পাটুরিয়া থেকে মানিকগঞ্জ আসতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪০০ টাকা।
‘গণপরিবহন না থাকায় সিএনজি, হ্যালোবাইক ও ভ্যানে আসতে হয়েছে। মানিকগঞ্জ এসেও অপেক্ষায় আছি। কিন্তু ভাড়া বেশি চাওয়ায় যেতে পারছি না।’
আরিচা এলাকার শাহজাহান শেখ জানান, ‘একদিকে কঠোর লকডাউন। আরেকদিকে কারখানা খোলা। আমাগো হয়েছে যত বিপদ। এমনিতেই গাড়ি কম চলে। তার মধ্যে আবার বেশি ভাড়া।
‘ঈদের আগেও দিছি বেশি ভাড়া। ঈদের পরে আমাগো কাছে টাকা-পয়সা থাকে না। শুধুমাত্র গাড়ি ভাড়াটা রাখি।’
মিরপুরগামী আনিছুর রহমান বলেন, ‘জরুরি একটা কাজের জন্য মিরপুর যেতে হবে। তাই মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। দেখি কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না।
‘মোটরসাইকেলে নবীনগর পর্যন্ত চায় আড়াই শ টাকা। প্রাইভেটকারে চায় ৫০০ টাকা। পিকআপে চায় সাড়ে ৩০০ টাকা। কিন্তু টাকা কম থাকায় যেতে পারছি না।’
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খাঁন বলেন, ‘মহাসড়কে যানবাহনের বিষয়টি খোঁজ নেয়া হবে। যারা হ্যালোবাইক, রিকশা, ভ্যান ও মিনি ট্রাকে করে যাত্রীবহন করছে এবং যারা এসব যানবাহন চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। মানুষ যদি সচেতন না হয়, তাহলে কীভাবে হবে। কারণ প্রশাসনের লোকজনের তো সব জায়গায় খোঁজ রাখা সম্ভব না। তারা তো সব স্ট্যান্ডে খোঁজ রাখতে পারে না।’
জেলার সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হয় এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে সে জন্যেই কঠোর লকডাউন। এখন মানুষ যদি এসব অমান্য করে চলাফেরা করে, তাহলে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে না।’