বৃষ্টিতে আবার তলিয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিচু এলাকা।
শুক্রবার রাত থেকে হওয়া বৃষ্টিতে টইটম্বুর ছিল চাক্তাই খাল, মহেশখালসহ খালসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা। সকাল থেকে নিচু এলাকাগুলোতে পানি উঠতে শুরু করে। দুপুর হতে হতে নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহরসহ অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
নগরের সিডিএ আবাসিকের ২২ নম্বর রোডের বাসিন্দা ইয়াসিন হিরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাসার সামনে এখন হাঁটুপানি। পানির কারণে বাসা থেকে বের হতে পারছি না।
‘কয়েক দশক ধরে পানির জ্বালা সইছি। স্লুইসগেট হবে, বেড়িবাঁধ হবে, নিরসন হবে জলাবদ্ধতা, এ রকম আশ্বাস দেয় সবাই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ৩৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু এখনও সক্রিয় থাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাশাপাশি একটি লঘুচাপও রয়েছে। আগামী কয়েক দিন এ ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।’
দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বেশ কিছু সড়কেও পানি উঠেছে। তবে আড়তে পানি ঢোকেনি। আড়ত ও দোকানের মুখে, পেছনে ইট-সিমেন্টের প্রতিরক্ষা বাঁধ দেয়ায় রাস্তায় পানি থাকলেও দোকানে ঢুকতে পারেনি।
চট্টগ্রাম মহানগরের দীর্ঘদিন সমস্যা জলাবদ্ধতা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।
প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মাঈনুদ্দিন সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বলেন, প্রকল্পের কাজ ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এই বছর সুফল না মিললেও ২০২২ সালে সুফল মিলবে। কাজের জন্য খালে বাঁধ দেয়ায় নগরের কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
এদিকে কর্ণফুলী নদীর তীর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়ক ও স্লুইসগেট নির্মাণের আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৮ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘আমার প্রকল্পের আওতায় ৮টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। সব গেটের কাজ শুরু হয়েছে। তিনটি গেটের নির্মাণকাজ শেষ। চাক্তাই খালের মুখের গেটের কাজ শেষ হওয়ায় এবার খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা হচ্ছে না। বাকিগুলোর কাজ শেষ হলে সুফল মিলবে।’
চট্টগ্রাম মহানগরে নতুন করে একটি খাল খনন (বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৬৫ ফুট প্রস্থ) প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থাভাবে এখনও ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। প্রকল্পের কাজও পুরোপুরি শুরু করা যায়নি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘টাকার অভাবে আমরা ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারছি না। সরকার টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে না।’
বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পেরও এখনও কাজ শুরু হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী ত্রয়ন ত্রিপুরা বলেছেন, প্রকল্পের অবকাঠামো কাজে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বর্ষার পর প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।