গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ভাঙচুরের অভিযোগে স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে স্বজনদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর বিচার ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাটিকামারী গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মৃতের পুত্রবধূ রিনা আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে রিনা আক্তার বলেন, গত ১৮ জুন দুপুরে তার অসুস্থ শাশুড়ি জাহেদা বেগমকে জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সে সময় হাসপাতালের ল্যাব বন্ধ থাকায় বাইর থেকে রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রক্ত পরীক্ষা করার পর বিকেলে রিপোর্টসহ রোগীকে আবার হাসপাতালে আনা হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ি অসুস্থ ছিল। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তারপর ডাক্তার ব্লাড টেস্ট করতে দিছে। ব্লাড টেস্ট করে নিয়ে আসার পর ডাক্তার সুজন পাল বলেন, আপনার শাশুড়ি সুস্থ আছে; ভাল আছে। আপনারা তাকে বাসায় নিয়ে যান।
‘এরপর সুজন পালের দুই ঘণ্টা হাত ধরছি, পাও ধরছি তবুও ভর্তি করায় নাই। তারপর শাশুড়ি বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে মারা গেলে তারা নিজের দোষ ঢাকার জন্য হাসপাতালে ভাঙচুর করে। পরে আমাদেরকে বের করে দিছে।’
রিনা আক্তার আরও বলেন, ‘এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো আমার স্বামীর নামে হাসপাতালে ভাঙচুরের মামলা দিছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমরা নাকি মৃত্যু রোগী হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তাহলে আমার প্রশ্ন হল, ওনারা তাহলে কাকে দুই মাসের ওষধ লিখে দিল। কাকে রিপোর্ট করতে দিল।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর এই ঘটনায় পর সদর থানায় মামলা করতে গেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি। আমার স্বামীর নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছি।’
গত ১৮ জুলাই গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রোগীর স্বজন জাহিদুল ইসলাম জাহিদের নাম উল্লেখসহ ৮-৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হারুন অর রশিদ।
মামলায় বলা হয়, গত ১৮ জুলাই বিকেলে জাহেদা বেগম নামে এক মৃত্যু রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে চিকিৎসক সুজন পাল রোগীকে মৃত্যু ঘোষণা করলে স্বজনরা চিকিৎসক ও নার্সদের মারধর করে। তারা হাসপাতালে ভাঙচুরও চালায়।
অভিযোগ না নেয়ার বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমি ছুটিতে ছিলাম। সবেমাত্র আজ ফিরেছি। তবে অভিযোগের বিষয়ে এখনও কিছু জানি না।’
তিনি বলেন, ‘এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেয়া হবে।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় রোগীর কোনো স্বজন থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হারুন অর রশিদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
তবে মোবাইলে কথা হয় চিকিৎসক সুজন পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোগীটা প্রথম যখন হাসপাতালে আসে সে সময় ডাক্তার সারোয়ার জাহান তমাল রোগীকে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে টেস্ট করতে বলেন। কিন্তু স্বজনরা রোগীকে ভর্তি না করে সময় নষ্ট করেন।
‘বিকেল ৪টার দিকে আমি রিপোর্ট হাতে পাই। এ সময় রোগীকে আমি হাসপাতালে দেখিনি। পরে রিপোর্টের ভিত্তিতে রোগীকে রক্ত দেয়ার কথা বলি। ঠিক এর ঘণ্টা খানেক পর বিকেল ৫টার দিকে আমি মৃত রোগী দেখতে পাই।’
রোগীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা ও ব্যবস্থাপত্র দেয়ার পরেও মামলায় কেন বা কী কারণে বলা হয়েছে হাসপাতালে মৃত রোগী আনা হয়েছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের সাথে ঘটনা ঘটে (হামলা-ভাঙচুর) সেই প্রেক্ষিতে লেখা হয়েছে। যেহেতু আমার উপর হামলা হয়েছে। হাসপাতালে ভাঙচুর হয়েছে এবং আমি মৃত রোগী পেয়েছি। সেই সব কারণে মামলায় এটা লেখা হয়েছে।’