দাদনের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে লক্ষ্মীপুরের রামগতির দুই জেলেসহ চার জেলেকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামি মধ্যে দুই জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঘটনার দুই মাসের মাথায় হত্যারহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
শুক্রবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রামগতির বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. কামরুজ্জামান।
তিনি জানান, চলতি বছরের ২০ মে চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ার কাছে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার থেকে চার জেলেকে ফেলে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা চায়ের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তাদেরকে খাইয়ে সাগরে ফেলে দেন।
হত্যার শিকার চার জেলে হচ্ছেন রামগতির চরআলেকজান্ডার ইউনিয়নের সোনালী গ্রামের নাসির উদ্দিন , তার ছেলে মো. রিয়াজ , নোয়াখালীর চরজব্বরের মো. করিম এবং একই এলাকার মো. মিরাজ।
হত্যাকারীরা প্রথমে ঘটনাটি জলদস্যুতা বলে প্রচার করলেও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়। এসময় ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের বাকলিয়া ফিশারিঘাটের আড়তদার ইউসুফ মিয়া চার জেলেকে হত্যার জন্য অন্য চার জেলের সঙ্গে এক লাখ টাকার চুক্তি করেন বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের ইউছুফ মিয়া, যশোরের চৌগাছার দক্ষিণ কয়ারপাড়া এলাকার মো. রাসেল ও লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পূর্ব চরফলকন এলাকার আল-আমিন। ইউছুফ মিয়া চট্টগ্রামের বাকলিয়া নতুন ফিশারিঘাট এলাকার আড়ৎদার।তাদের মধ্যে আল-আমিন ও রাসেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বেলাল হোসেন।
গ্রেপ্তারকৃত তিনজন কারাগারে রয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সুমন ও সোহাগকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৩ জুন নাসিরের স্ত্রী মীরজান বেগম রামগতি থানায় রাসেলের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত দুই-তিন জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
নৌ-পুলিশ জানায়, রামগতির চরআলেকজান্ডারে সোনালী গ্রামের নাসির উদ্দিন মাঝি নিজের ট্রলার দিয়ে সহযোগী জেলেদের নিয়ে নদী ও গভীর সাগরে মাছ ধরে বিভিন্ন ঘাট এলাকায় আড়তে বিক্রি করে করতেন। প্রায় ১০ মাস আগে তিনি চট্টগ্রামের বাকলিয়ার নতুন ফিশারিঘাটের আড়তদার ইউছুফ মিয়ার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাদন নেন।নিয়মিত ওই আড়তে মাছ বিক্রি করে আসছিলেন তিনি। ঘটনার কিছুদিন আগে অভাব-অনটনে পড়ে নাসির ওই মাছঘাটের অপর এক আড়তদারের কাছ থেকে কিছু টাকা দাদন নেন। এতে ইউছুফ ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১২ মে ট্রলারসহ নাসির মাঝিকে ঘাট এলাকায় আটক করে রাখেন। নাসির কৌশলে ট্রলার নিয়ে পালিয়ে এলাকায় চলে আসেন। এতে ইউছুফ নাসির মাঝিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।পরিকল্পনা অনুযায়ী নাসির মাঝির ট্রলারের সহযোগী জেলে রাসেল, সুমন, সোহাগ ও আল-আমিনের সঙ্গে ইউছুফ এক লাখ টাকায় চুক্তি করেন।
তার পরিকল্পনা ও চুক্তি অনুযায়ী ১৬ মে ওই চার জেলে আলেকজান্ডারের স্লাইসগেট বাজারের ওষুধ দোকান থেকে ঘুমের ১০টি ট্যাবলেট কেনেন। পরদিন নাসির মাঝি ও অপর তিন জেলেসহ ওই চারজন মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান।
নদীতে মাছ কম ধরা পড়ার অজুহাত দেখিয়ে কৌশলে নাসির মাঝিকে হত্যাকারীরা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকায় সাগরে নিয়ে যান। তারা ২০ মে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে নাসির মাঝি, রিয়াজ, করিম ও মিরাজকে খেতে দেন। চা খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়লে ওই চারজন তাদেরকে সাগরে ফেলে দেন।
এসআই বেলাল হোসেন জানান, মোবাইল ট্র্যাকিংসহ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে রাসেলকে আটকের মধ্যে দিয়ে তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। পরে তিন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের পুরো রহস্য বেরিয়ে আসে।
তিনি বলেন, দুই আসামি আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।